`জ্বীনে মেরে ফেলেছে, গোসল জানাজাও শেষ, দাফন করে দিন।` উক্তিটি কোনো আলেম-ওলামায়ের নয়। নয় কোনো বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের। কুমিল্লায় তিন বছরের এক শিশুর দুষ্টুমি নিরাময়ে কথিত কবিরাজ মাহাবুবুর রহমান দাম্ভিকের সঙ্গে তার মাকে এ কথা জানান মোবাইল ফোনে।
ফুটফুটে চঞ্চল শেখ ফরিদ। বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচংয়ের ময়নামতি সিন্দুরিয়া পাড়ায়। বাবা প্রবাসী জামাল হোসেন। একমাত্র সন্তানকে একটু ভাল জীবন দেবার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে। মা-ই শেখ ফরিদের একমাত্র সঙ্গী। খেলাধুলা আর দুষ্টুমি, সবকিছুতেই মা। মাকে জড়িয়েই ছোট্ট ফরিদের জীবন। তাই কখনো কখনো দুষ্টুমির মাত্রাও হয় খানিকটা বেশি। কিন্তু একলা সংসার গোছানো মা কখনো কখনো হারিয়ে ফেলেন ছেলের দুষ্টুমির ধৈর্য্যের মাত্রা। তাই ভাবেন ফরিদের দরকার চিকিৎসা। খুঁজে বের করেন কবিরাজের সন্ধান।
গেলো শুক্রবার সকালে ফরিদকে নিয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ভাড়াপাড়ায় কবিরাজ মাহবুবের বাড়ি যান তার মা। উদ্দেশ্য ছেলের দুষ্টুমির চিকিৎসা করানো। কবিরাজ মহাশয়ও মত দেন তাতে। বলেন, রেখে যান তাকে। লাগবে ভাল চিকিৎসা। তাই দরকার তিনদিন। গ্রাম্য মা-ও করেন তা। ছোট্ট শিশু ফরিদকে রেখে যান কথিত কবিরাজের কাছে।
রাতে ফোন করে ছেলের খবর নেন শিশু ফরিদের মা। কবিরাজ জানান,`ফরিদ ভালো আছে। তার চিকিৎসা চলছে, রোববার এসে নিয়ে যাবেন। সে এখন একবারে ভদ্র আর শান্ত, সব ঠিক হয়ে যাবে`। তাতে খুশি মা। অপেক্ষায় শান্ত হয়ে যাওয়া ছেলের জন্য। দিন তো মাত্র আর দুটি। মন না মানলেও ছেলের দুষ্টুমি কমাতে কঠিন হলেন মা।
রাত যেন-তেন কাটলেও,শনিবার বেলা গড়িয়ে দুপুরে মোহ ভাঙ্গে সেই মায়ের। ১ টার দিকে বাড়ি ঘাটায় এম্বুলেন্স। দৌড়ে গিয়ে দেখেন, সাদা কাফনে মোড়ানো শেখ ফরিদের মরদেহ। নিয়ে এসেছেন কবিরাজের খাদেম। ছেলের মৃত্যুতে আত্মচিৎকারের মুর্হূতে বেজে ওঠে তার মোবাইল। কবিরাজ মাহবুবের কণ্ঠ,`জ্বীনে মেরে ফেলেছে সকালে, গোসল জানাজা হয়ে গেছে, দাফন করে দিন`। এসব শুনতে শুনতেই জ্ঞান হারান ফরিদের মা।
চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসায় ছোট্ট একটি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্য ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে সিন্দুরিয়া পাড়ায়। কবিরাজের খাদেম ও এ্যাম্বুলেন্সের চালককে কোতোয়ালী থানায় সোর্পদ করেন এলাকাবাসী। পুলিশ ফরিদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মারুফ জানান, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাড় পাবে না, কেউই।
তিন বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার বিবরণ জানিয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আবু সালাম বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিচ্ছি।