আমার চোখে রাতের ফরিদপুর - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Saturday, March 28, 2020

আমার চোখে রাতের ফরিদপুর

সঞ্জিব দাস : :
গত চার দিন ধরে বলতে পারেন ঘর বন্দি হয়ে জীবন যাপন করছি। এসময় ঘরের মধ্যে থাকা ল্যাপটপ আমার তিন বছরের শিশু সন্তান সোহানকে নিয়ে খেলাধুলা করে সময় পার করছি। তবে কোন ভাবেই এই সময় পার হতে চাচ্ছে না। তারপরেও নিজের জন্য, দেশের জন্য নিয়মটি মেনেই চলছি। নিজ সাংবাদিক পেশাকে কোন মতে হ্যান্ডেল করছি এটাও সত্যি। যদিও এই পেশা এভাবে ঘরে থেকে হয় না।  


যাই হোক চারদিন থাকার পরে শুক্রবার রাতে আটটার দিকে একটু হাটতে বের হয়েছিলাম শহরের দিকে। সত্যি বলতে আমি চিনতে পারিনি আমার নিজ শহরকে। কেমন যেন গুমোট এক প্রান্তর দিয়ে আলীপুর হয়ে শহরের প্রধান সড়কে উঠতেই সেখানেও যেন এর কোন পরিবর্তন দেখা গেলো না। নিজে ভাবলাম হয়তো সামনে কাউকে পাব, কিন্তু কাউকে পাইনি। এভাবে জনতা ব্যাংক মোড়ে গিয়ে দেখলাম কয়েকটি কুকুরের হাকডাক। তবে তাদের দেখে মনে হলো তারাও মনোব্রত পালন করে চলছেন। ইচ্ছে ছিলো থানার সামনে তরকারি বাজারে গিয়ে কিছু রসুন কিনবো। কিন্তু সেখানেও কোন দোকান খোলা নেই। ব্যস্ততম এই জায়গাটি মনে হলো কোন ভূতরে পরিবেশে বন্দি। এরপর ময়রা পট্রি এলাকায় গিয়ে নিজেকে আমি নিজেই চিনতে পারিনি সত্যি বলতে। একটা সময় মনে হলো কেউ হয়তো চোর চোর বলে আমাকে পিছন থেকে এসে মারবে। যাই হোক এই সময়ে সেটা হয়নি। কোলাহল মুক্ত রাস্তা-ঘাটের অবস্থা দেখে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় ফেরা যায় ততটাই এরপর লক্ষ্য ছিলো।  

বাসায় ফিরে এক এক করে সব কিছু যখন সাবান পানি দিয়ে ধৌত করছিলাম তখন একটি কথা মনে হয়েছে এটা আমার কোন শহর নয়। এটা কোন প্রচীন যুগের গ্রীক সভ্যতার কোন ভূতরে নগরী। 


আমি রাতটার সময় ফরিদপুর শহরের এমন রুপ আমার জীবনে কখনো দেখিনি। তারপরও নিজ থেকে সকলে ঘড়ে থাকার এমন মহান কাজটি হয়তো সবাই দেশের কথা ভেবেই করছেন। এখানে হয়তো আমাদের সকল জাতিগোষ্ঠি দল মতের উর্দ্ধে উঠে এক হতে পেরেছি এর থেকে ভালো লাগা আর কিছইু নেই। 


নিজের ভালো রাখতে, পরিবার, সমাজ ও দেশের কথা ভেবে নিজ থেকে এমন নিরব ঘড়ে থাকার উদাহরন খুব কম দেখা যায় ইতিহাসে। একুবিংশ শতাব্দি যখন মাথা তুলে নতুন এক বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে ঠিক সেই মূর্হতে এলো এই ঝড়। যাতে ১৯৮টি দেশ মোকবেলায় ব্যস্ত শুধু বললে ভুল হবে, অনেক রাষ্ট্র এই সংকট মহামারি মোকাবেলার খেই হারিয়ে এখন উপরের দিকে চেয়ে রয়েছে। 


এদিকে দেশে চলছে টানা দশ দিনের ছুটি। এর উপর জরুরী প্রয়োজনীয় যানবাহন ছাড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাইরে বের হতে। যে কারনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জনতা ব্যাংক মোড়ে আজ নেই কোন কোলাহল। জেলার সদর থেকে শুরু করে উপজেলার সদরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শহর গুলোতে জনসাধারনে চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। 

আর এই কাজটি জেলা জুড়ে নিরবিছিন্ন রাখতে জেলা পুলিশের কথা আমাকে বলতেই হবে। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টাই আজকের এই জেলা রয়েছে নিরাপদ এখনো।

রাতের চোখে শহরের এমন ভূতরে পরিবশে আমার মেনে নিতে একটু কষ্ট হয়নি। এটাই আমার ও আমাদের সকলের ভালো থাকার এক জয়গান।
 

শেষ করবো ফররুখ আহমেদ এর কবিতা পাঞ্জেরি যেটা শুক্রবার ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক তার ফেসবুক পোষ্টে দিয়েছেন কটা লাইন সেখান থেকে কবিতার লাইন গুলো দিয়ে-
 

‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।’
-- এ ঘন ঘোর অমানিশা একদিন কেটে যাবেই।
পৃথিবীতে আবার ফিরে আসবে প্রাণ প্রাচুর্য;
বেঁচে থাকুক পৃথিবী, বেঁচে থাকুক এর সকল মানুষ!

No comments: