ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ করেও অবরুদ্ধ ও নির্যাতনের শিকার ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, জুন ২০, ২০২০

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ করেও অবরুদ্ধ ও নির্যাতনের শিকার ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা

 

ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ করেও রেহাই পাননি ফরিদপুরের এককালের রাস্তার লড়াকু সংগ্রামের বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিকেরা। নিজ দল আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা সত্তে¡ও নির্যাতন, হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছেন অনেকে। অনেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে অবরুদ্ধ হয়ে রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকেন। অপেক্ষায় ছিলেন একদিন সময় আসবে। সেই পরিবেশ তৈরি হওয়ায় এখন আবার সেই সকল আওয়ামীলীগ নেতারা রাজনীতিতে চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করছেন।

গত ২০০৮ সালের পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ দল ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামীলীগ দলে অনুপ্রবেশ করে একদল হাইব্রীড ও সুবিধাভোগিরা। তাদেরকে দলে ঢুকানোর কাজটি করেন সুবিধাভোগি একটি শ্রেনি তাদের হীনস্বার্থে। শুরু হয় তান্ডবলীলা তারা এসেই হেলমেট ও হাতুরি বাহিনি সৃষ্টি করে হামলা-মামলা ও নির্যাতন করে যা ৭১সালের পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনকেও অনেক ক্ষেত্রেও হার মানায় ফরিদপুরে। একই সাথে দলের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাকর্মিদের নিষ্ক্রয় করতে বাধ্য করেন তারা। বিভিন্ন সরকারী অফিস দখল করে শুরু করে রামরাজত্ব হাইব্রিডরা।

একই সাথে শুরু হয় আওয়ামীলীগের রাজপথের প্রকৃত ত্যাগী নেতা কর্মীদের নামে হামলা ও মিথ্যা মামলা দেয়া। এসময় বঙ্গবন্ধুর আগরতলার মামলার অন্যতম আসামী ক্যাপ্টেন নূর মোহম্মদ বাবুল, হামীম গ্রæপের কর্ণধার ও আওয়ামীলীগ নেতা এ কে আজাদ, সাবেক ছাত্রনেতা শওকত আলী জাহিদ, সাবেক জেলা আওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোকারম মিয়া বাবু, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সত্যজিৎ মূখার্জি, এককালের তুখোড় ছাত্র নেতা অ্যাডঃ বদিউজ্জামান বাবুল, সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুরজ্জামান, আওয়ামীলীগ নেতা কুদ্দুসুর রহমান, শামসুল আলম চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক অলক সেন, রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভি.পি ও ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মো: তাউফিক হোসেন পুচ্চি। এদের অনেককে মারপিট ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। তাদেরকে বাধ্য করা হয় ঘরে থাকতে।

এছাড়াও  প্রথম আলোর ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি প্রবীর কান্তি বালা, সাংবাদিক প্রবীর শিকদার, ইনকিলাব ও মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি নাজিম বাকাউল, ২০১৬ সালের ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগ এর সম্মেলনের সংবাদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রকাশ করায় কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় দৈনিক গণসংহতি পত্রিকার সম্পাদক ও মোহনা টেলিভিশন এর ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি আশিষ পোদ্দার বিমান, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকিকে হাতুরি বাহিনি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এছাড়াও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক, ডিবিসি টেলিভিশন এবং মানবজমিন পত্রিকার ফরিদপুর প্রতিনিধি মাহাবুবুল ইসলাম পিকুলের বাড়িতে হামলা চলায় হাতুরি বাহিনী। এসব ঘটনায় তৎকালীন প্রশাসন কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি সেইসব অনুপ্রবেশকারীদের ক্ষমতার জোরের কাছে। 

ফরিদপুরে থেকে দলের দূর্দিনে ভূমিকা রাখা তুখোর এসব নেতারা অনেকে সম্মানের ভয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকতে বাধ্য হন তখন তাদের অবৈধ অর্থ ও ক্ষমতার কাছে। এরা হলেন ১৭বার কারাজীবন ভোগ করা ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য বিপুল ঘোষ, অ্যাডঃ শামসুল হক ভোলা মাস্টার, ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগ এর মহিলা সম্পাদিকা আইভি মাসুদ ও ফরিদপুর আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন, সাবেক ছাত্র নেতা কাজী মোমিতুল হাসান বিভুল, মনিরুল হাসান মিঠু, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন, খলিফা কামাল উদ্দিন, অমিতাভ বোস, খন্দকার মঞ্জুর আলী, সাইফুল ইসলাম নিল প্রমুখ।

দলের এমন পরিস্থিতিতে মনের দুঃখে কষ্টে যারা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন এবং অনেকে ঢাকা চলে গিয়েছেন এদের মধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক মাহাবুব খান, কৃষি সম্পাদক শ্যামল ব্যানার্জি, জিয়াউল হাসান মিঠু, এনামুল হক শামীম, আমিনুল ইসলাম রিপন, খায়রুজ্জামান মিরাজ প্রমূখ।

সর্বশেষ গত ১৬ই মে রাতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আ্যড: সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও মারপিটের ঘটনা ঘটায় হেলমেট ও হাতুরি বাহিনি সহ হাইব্রিট নেতারা। বিষয়টি নজরে আসে আওয়ামীলীগের হাইকমান্ডের। এসময় দলের হাইকমান্ড নির্দেশ দেন আ্যড: সুবল চন্দ্র সাহাকে মামলা করার জন্য। তিনি বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় অঙ্গাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে। তারা দ্রæত এমন ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন স্থানীয় প্রশাসনকে। আটক করা হয় এ ঘটনায় জরিত থাকা ১০জনকে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন পুলিশ প্রশাসন।  

বিষয়টি দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টগোচর হলে ফরিদপুরের সাংগঠনিক কর্মকান্ড নজরে আসায় দলীয় নেতা কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য দল থেকে হাইব্রীড ও অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। দলের একটি সূত্র জানায় কেন্দ্র দলের প্রেসিডিয়াম কাজী জাফর উল্লাহ ও আব্দুর রহমানকে দায়িত্ব দেন ফরিদপুরের আওয়ামীলীগকে ঢেলে সাজানোর। সেই আলোকেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নির্যাতিত ও হামলা মামলা শিকার হওয়া নেতা কর্মীরা।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা জানান, উপর থেকে নির্দেশনা থাকায় আমরা কাজ শুরু করেছি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে। এরই মধ্যে শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে দুজনের বহিস্কার আদেশ সুপারিশ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে পার্টির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বরাবর। তিনি বলেন আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো মানবতার জননী সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। আমি তাকে মানবতার জননী বলি এই কারনে যে তিনি কাজে কর্মে প্রমান করলেন ফরিদপুরের এই ঘটনায়। 


জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নির্বাহী সদস্য তূখর নেতা বিপুল ঘোষ বলেন, জীবনের পুরো সময়টাই ব্যয় করেছি রাজনীতি করতে গিয়ে। এর জন্য ১৭ বার কারাজীবন ভোগ করতে হয়েছে। দলকে বিপদের দিনে সাজালাম প্রেক্ষাপট তৈরি করলাম আর নেতৃত্বে আসলো কারা সেটা সবাই জানে। আমি এই ফরিদপুরের মাটি ছেড়ে যায়নি এই কারনে যে দল একদিন তার ভুল বুঝতে পারবে এবং মূল্যায়ন করবে। আজ আমাদের প্রানের নেত্রী মানবতার জননী দল থেকে লুটেরা হাইব্রীড অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন জেলায়। আমরা এই দিনটির জন্যই এতো দিন অপেক্ষায় ছিলাম। আমি এর জন্য আমাদের প্রানের নেত্রী মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি ফরিদপুর আবার জেগে উঠবে মূল আওয়ামীলীদের গতি ধারায়। আর এই ক্ষেত্রে আমরা সকলে এক যোগে কাজ করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আর এই দায়িত্ব পালনে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।  


ফরিদপুরের আওয়ামীলীগকে পূর্নগঠন করে চাঙ্গা করার জন্য এবং লুটেরা স্বাধীনতা বিরোধী হাইব্রিট নেতাদের দলথেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতঙ্গতা জানিয়েছেন ফরিদপুরবাসি। একই সাথে সুবিধাভোগী লুটেরা হাইব্রিট নেতাকর্মীরা যাতে দলে আর কোনোদিনও প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছে ফরিদপুরের ত্যাগী ও পরিক্ষিত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিরা।

Post Top Ad

Responsive Ads Here