সেদিন ‘আব্বারে’ ‘ভাইরে’ ‘ছেড়ে দে’ বলে আকুতি জানিয়েও হয়নি শেষ রক্ষা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১

সেদিন ‘আব্বারে’ ‘ভাইরে’ ‘ছেড়ে দে’ বলে আকুতি জানিয়েও হয়নি শেষ রক্ষা



নিজস্ব প্রতিনিধি :


বিয়ের পর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাবার বাড়িতে থাকাকালীন ঐ গৃহবধূকে প্রায়ই নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতো এবং নানা খারাপ প্রস্তাব দিতো এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা। ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে তার স্বামীকে বাইরে বেঁধে রেখে ঘরের ভেতরে তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ধর্ষণের চেষ্টা চালায় তারা। এমনকি পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণও করে। সেদিন দেলোয়ার ও তার লোকদের ‘আব্বারে’ ‘ভাইরে’ ‘ছেড়ে দে’ বলে আকুতি জানিয়েও রক্ষা পাননি ঐ নারী।


১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে ভুক্তভোগী নারীকে বারবার দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যদের ‘ওরে আব্বারে, ভাইরে, তোগো আল্লাহর দোহাই...। ওরে ভাইরে, ওরে আব্বারে ছেড়ে দে...।’ বলে আকুতি করতে দেখা গেছে। ঐ সময় দুর্বৃত্তদের একজন বারবার ‘ফেসবুক হইবো, ফেসবুক’ বলতে থাকে। নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণের পর দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা ওই রাতে বাড়ি থেকে যাওয়ার পথে নারীকে ঘটনা কাউকে না জানাতে শাসায় এবং জানালে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে যায়।


নির্যাতনের সময় দেলোয়ার বাহিনীর ভয়ে ওই নারীকে রক্ষা করতে বাড়ির কিংবা আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত নারী ঘটনার বিষয়ে বিচারপ্রার্থী না হয়ে জেলা শহরের হাউজিং এলাকায় বোনের বাসায় আশ্রয় নেন। কিন্তু তাতেও পিছু ছাড়েনি দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা। তারা নারীকে বারবার ফোন করে অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকে। আর প্রস্তাবে রাজি না হলে তাদের কাছে থাকা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।


সর্বশেষ ওই নারী দেলোয়ার বাহিনীর কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ধারণ করা ভিডিও চিত্রটি গত বছরের ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। এরপর তৎপর হয় পুলিশ ও প্রশাসন। তারা ঐদিনই নারীকে খুঁজে বের করে তাকে বাদী করে দেলোয়ার বাহিনীর ৯ সদস্যের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে থানায় দুটি মামলা করে।


মামলা করার পর পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করে। এরই মধ্যে নির্যাতনের ঘটনাটি সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ২০২০ সালের ৬ জুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দল নোয়াখালীতে এলে ঐ নারী তাদের কাছে অভিযোগ করেন- দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার এর আগে তাকে দুইবার ধর্ষণ করেছে। কিন্তু ভয়ে তিনি মামলা করতে সাহস পাননি। পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহায়তায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় আরেকটি মামলা করেন ঐ নারী।


গত বছরের ৭ অক্টোবর মামলা দুটির তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই। তদন্তে নারীকে মারধর, বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি আটজন আর এজাহারবহির্ভূত ছয়জন।


পিবিআই সূত্র জানায়, গ্রেফতার ১২ আসামির মধ্যে ৮ জন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- নুর হোসেন ওরফে বাদল, মো. রহিম, মাঈন উদ্দিন ওরফে সাজু, মোহাম্মদ আলী ওরফে আবু কালাম, ইস্রাফিল হোসেন ওরফে মিয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগ মেম্বার, নুর হোসেন ওরফে রাসেল ও আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহাগ।


১৫ ডিসেম্বর আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। এরপর গত ২৪ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্রভুক্ত ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালে আদালত ৪০ সাক্ষীকে পরীক্ষা করা হয়।


সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ ঐ নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা ও নির্যাতনের মামলার আর্গুমেন্ট শুনানি শেষ হয়। ঐদিনই বিচারক জয়নাল আবেদিন মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন। মঙ্গলবার রায়ে মামলার ১৩ আসামির প্রত্যেকের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৩ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।


এর আগে চলতি বছরের ৪ অক্টোবর একই আদালতে ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা অপর মামলায় অভিযুক্ত দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ও তার সহযোগী আবুল কালামকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।



 

Post Top Ad

Responsive Ads Here