রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, জানুয়ারী ১৪, ২০২২

রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলা

রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে সন্ত্রাসী গ্রুপের রাজত্ব
রোহিঙ্গা ক্যম্প -ছবি: সংগৃহীত





নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দিনের আলোতে যেমন-তেমন, রাতের আঁধারে পরিণত হয় আতঙ্ক আর ভয়ের নগরীতে। রাত হলেই ক্যাম্পগুলোতে রাজত্ব করে আরসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ। ক্যাম্প দখল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে তারা।

প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা এবং উখিয়ার একটি মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলায় ৬ রোহিঙ্গা নিহতের পর থেকে ক্যাম্পে সক্রিয় হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ। এ কারণে সন্ধ্যার পর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেই বের হতে চায় না ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে মিয়ানমারে ফিরে যেতে ইচ্ছুক সাধারণ রোহিঙ্গারাও আছে নিরাপত্তাহীনতায়।


স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করতেই মিয়ানমারের পৃষ্ঠপোষকতায় রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আরো সক্রিয় হয়ে উঠছে। মুহিবুল্লাহ হত্যা, মাদরাসায় হামলার মাধ্যমে তারা ক্যাম্পে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা থামাতে না পারলে হুমকির মুখে পড়বে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে।


সরেজমিনে পরিদর্শনে জানাযায় মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে সাধারণ রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে চরম উদ্বেগ  আতঙ্কে সময় পার করছে। এরপর উখিয়ার থাইনখালী (ক্যাম্প-১৮) ক্যম্পের মাঝামাঝি  সড়কের পাশে টিনের ছাউনি দেওয়া মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলায় ৬ রোহিঙ্গার নিহত হওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প আরও অস্থির হয়ে ওঠে।


টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মিই (আরসা) মূলত ক্যাম্পগুলোতে তৎপর। আরসার সদস্যরা আল ইয়াকিনসহ কয়েকটি ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তবে কক্সবাজার জেলা পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরসা বা আল ইয়াকিনের কোনো অস্তিত্ব নেই।


উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইসমাইল ও টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের নেতা জাফর আহমদ বলেন,ক্যাম্পে বসবাসকারী কিছু রোহিঙ্গা যুবক এসব সন্ত্রাসী গ্রুপকে গোপনে সহযোগিতা করছে। দিনে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও রাতে ক্যাম্পে তাদের ভয়াবহ আতঙ্কে থাকতে হয়। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কারণে ক্যাম্পে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হচ্ছে।


কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ৭৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪৯ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।


জেলা পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা অথবা আল ইয়াকিন নামে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা নেই। মাস্টার মুন্না গ্রুপ, মৌলভী ইউসুফ গ্রুপ, শাহ আজম গ্রুপ, সালমান শাহ গ্রুপ, আব্দুল হাকিম বাহিনী, নবী হোসেন বাহিনীসহ অসংখ্য ছোট ছোট গ্রুপ গড়ে উঠেছে। তারাই আরসা-আল ইয়াকিনের নাম ব্যবহার করে অপতৎরতা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে, বাকিদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে।


১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত তথাকথিত আরসা নামধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের ১১৪ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত আরো ৫৮ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। তথাকথিত সন্ত্রাসী গ্রুপের নামে কাউকে অপরাধ কার্যকলাপ করতে দেওয়া হবে না।

মোঃসাইফুল্লাহ /সময় সংবাদ 

Post Top Ad

Responsive Ads Here