বিনাচিনা বাদাম -৭,হেক্টর প্রতি ফলন আড়াই টন | সময় সংবাদ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, জুন ১১, ২০২২

বিনাচিনা বাদাম -৭,হেক্টর প্রতি ফলন আড়াই টন | সময় সংবাদ

 

বিনাচিনা বাদাম -৭,হেক্টর প্রতি ফলন  আড়াই টন | সময় সংবাদ
বিনাচিনা বাদাম -৭,হেক্টর প্রতি ফলন আড়াই টন | সময় সংবাদ




কৃষি ডেস্ক:



আসন্ন আষাঢ় মাসেই বীজ বপন করতে পারেন বিনা উদ্ভাবিত চিনাবাদামের।বিনাচিনাবাদাম-৭ এর ফলন বেশ ভালো। ফলন হেক্টরে প্রায় আড়াই টনের বেশি। তবে, লবনাক্ত মাটিতে একটু ফলন কম। হেক্টরে প্রতি স্বাভাবিক মাটিতে গড় ফলন ২.৫২ টন ও লবণাক্ত মাটিতে ফলন ১.৮ টন পাওয়া যায়।


জাতের বৈশিষ্ট্যঃ

লবণ সহিষ্ণু (ফুল আসা থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যমত সময়ে ৮ডি.এস./মি. লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে)। দানা মধ্যম আকারের অর্থাৎ মাতৃজাত ঢাকা-১ থেকে বড় (১০০ দানার ওজন ৩০-৩৩ গ্রাম), দানার শতকরা হার ৬০-৭৯ ভাগ। বীজে আমিষ ও তেলের পরিমাণ যথাক্রমে শতকরা ২৮.০ ও ৪৮.৩ ভাগ। জীবনকাল ১৩৫-১৪৫ দিন। জ্যাসিড ও বিছা পোকার আক্রমন সহ্য ক্ষমতা বেশি।


জমি ও মাটিঃ

বেলে, বেলে-দো-আঁশ, দো-আঁশ, এঁটেল-দো-আঁশ। ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরি করতে হবে।


পড়তে পারেন: বিনা উদ্ভাবিত চিনাবাদাম ১০, হেক্টরে ফলন আড়াই টন


বপন সময়ঃ রবি স্বাভাবিক মাটি- ১৫ই ডিসেম্বর হতে ১৫ ফেব্রুয়ারী (পৌষের ১ম সপ্তাহ হতে ফাল্গুণের ১ম সপ্তাহ) লবণাক্ত মাটি- ১৫ই ডিসেম্বর হতে ১৫ জানুয়ারী (পৌষের ১ম সপ্তাহ হতে মাঘের ১ম সপ্তাহ) খরিপ-২ স্বাভাবিক মাটিুজুলাই হতে আগস্ট (অষাঢ়ের ৩য় সপ্তাহ হতে ভাদ্রের ৩য় সপ্তাহ)


বীজ হারঃ ১২৫-১৩০ কেজি/হেক্টর


বীজ শোধনঃ লাগানোর আগে বীজ শোধন করে নিলে ভাল হয়। এ জন্য প্রতি ৪০০ গ্রাম বীজের জন্য ১ গ্রাম প্রোভ্যাক্স বা ব্যাভিস্টিন অথবা ভিটাভ্যাক্স নামক বীজ শোধনকারী ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। শোধিত বীজ জমিতে বপন করলে চারা গজানোর হার বেড়ে যাবে।


সার ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ ইউরিয়া ৪০-৫০ কেজি/হেঃ এবং প্রতি বিঘাতে ৫-৭ কেজি। টিএসপি-১৬৫-১৭৫ কেজি/হেঃ এবং প্রতি বিঘাতে ২২-২৩ কেজি। এমপি ১৩০-১৪০ কেজি/হেঃ এবং প্রতি বিঘাতে ১৭-১৯ কেজি। জিপসাম ১১০-১২০ কেজি/হেঃ এবং প্রতি বিঘাতে ১৫-১৬ কেজি। জীবাণুসার- প্রতি কেজি বীজের জন্য ৪০ গ্রাম। উল্লেখ্য যে, জীবাণুসার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।


সেচ ও নিষ্কাশনঃ বাদামে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না তবে মাটি অধিক শুষ্ক হলে বা অতিরিক্ত খরায় গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে ১ বার পানি সেচের প্রয়োজন ।



আগাছা দমনঃ চিনাবাদাম রোপনের পর গাছ ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হওয়ার পর ১ম বার এবং ফুল আসার পূর্বে ২য় বার আগাছা থাকলে নিড়ানী দিতে হবে ও মাটি আলগা করে দিতে হবে।


বালাই ব্যবস্থাপনাঃ

পিপিঁলিকা দমনঃ জমিতে বাদাম লাগানোর পর পর পিপিঁলিকা আক্রমন করে রোপিত বাদামের দানা সব খেয়ে ফেলতে পারে। এ জন্য বাদাম লাগানো শেষ হলেই ক্ষেতের চারিদিকে সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া ক্ষেতের চারিদিকে লাইন টেনে কেরোসিন তেল দিয়েও পিপিঁলিকা দমন করা যায়।


উইপোকাঃ উইপোকা চিনাবাদাম গাছের এবং বাদামের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। এরা বাদাম গাছের প্রধান শিকড় কেটে দেয় এবং শিকড়ের ভিতর গর্ত সৃষ্টি করে। ফলে গাছ মারা যায়। উইপোকা মাটির নিচের বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়।


প্রতিকার


পানির সাথে কেরোসিন মিশেয়ে সেচ দিলে উইপোকা জমি ত্যাগ করে। পাট কাঠির ফাদ তৈলি করে এ পোকা কিছুটা দমন করা যায়। মাটির পাত্রে কাঠি ভর্তি করে পুতে রাখলে তাতে উইপোকা লাগে। তারপর ঐ কাঠি ভর্তি পাত্র তুলে উইপোকা মারতে হবে। আক্রামত মাঠে ডায়াজিনন-১০ জি বা বাসুডিন-১০ জি বা ডারসবান-১০ যথাক্রমে প্রতি হেক্টরে ১৫,১৪ ও ৭.৫ কেজি হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। চিনাবাদামের পাতা ছিদ্রকারী পোকাঃ এই পোকার কীড়া পাতার ভিতরে অবস্থান করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। অধিক আক্রামত গাছ পুড়ে যাওয়ার মত মনে হয়।




পাতা মোড়ানো পোকাঃ এই পোকার কীড়া চিনাবাদামের ছোট পাতাগুলোকে মুড়িয়ে ভিতরে বসে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। পাতা সাদা হয়ে যায়।


চীনাবাদামের বিছা পোকা। এই পোকার কীড়া দলবদ্ধভাবে পাতার নীচে থেকে সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে জালের মত করে ফেলে। চিনাবাদামের জ্যাসিড বা পাতা হপারঃ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পূর্নাঙ্গ পোকা গাছের পাতার রস শোষণ করে। প্রথমে পাতার কিনারা হলুদ তামাটে পরে লালচে রং ধারণ করে। এ পোকা ভাইরাস রোগের বাহক হিসাবেও কাজ করে। চিনাবাদামের পাতা ছিদ্রকারী পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, বিছা পোকা ও জ্যাসিড বা পাতা হপার এর সমন্বিত দমন ব্যবস্থা


আলোর ফাঁদ পেতে। আক্রামত ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পতঙ্গভুক পাখী বসার ব্যবস্থা করে। পরজীবি পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। জাব ও জ্যাসিড বা পাতা হপার এর ক্ষেত্রে পরজীবি ও পরভোজী উভয় ধরণের পোকার বংশ বৃদ্ধি করে। বিছা পোকার ক্ষেত্রে আক্রমনের প্রথম অবস্থায় পাতার নীচে দলবদ্ধ বিছাগুলোকে হাত দিয়ে সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুঁতে অথবা কোন কিছু দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।


১০ লিটার পানির সাথে ২০ মি.লি. ক্লাসিক ২০ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। বিছা পোকার ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানির সাথে ১১ মি.লি. রিপকার্ড ১০ ইসি মিশিয়ে প্রযোগ করা যেতে পারে। অথবা সাইথ্রিন ১০ ইসি একই মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। চিনাবাদামের জ্যাসিড বা পাতা হপারের ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানিতে ১১ মি.লি. সিমবুশ ১০ ইসি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। চিনাবাদামের জাব পোকাঃ বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক জাব পোকা পাতার উল্টো দিক থেকে রস শোষণ করে থাকে। আক্রমনের ফলে পাতা কিছুটা কুকড়ে যায়।


চিনাবাদামের জাব পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থা পরজীবি ও পরভোজী পোকার বংশ বৃদ্ধি করে। ১০ লিটার পানির সাথে ১১ মি.লি. সাইথ্রিন ১০ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ লিটার পানিতে ২০ মি.লি. মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।


চিনাবাদামের পাতার দাগ রোগঃ


আগাম দাগ রোগঃ সারকোস্পোরা এরাচিডিকোলা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃুষ্ট হয়। আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে এ রোগ রোপনের ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এ রোগের ফলে পাতার উপরিভাগে গাঢ় বাদামী রংএর উপবৃত্তাকার দাগ এবং পাতার নীচের দিকে হাল্কা বাদামী রংএর ছাপ পড়ে। পাতার যখন রোগের আক্রমন খুব বেশী হয় তখন ছোট ছোট উপবৃত্তাকার দাগ গুলো মিলে বড় দাগের সৃষ্টি হয়ে পাতার সবুজ রং নষ্ট করে ফেলে ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং পাতা গাছ থেকে অকালে ঝড়ে পড়ে।




বিলম্বে আসা দাগ রোগঃ ফেয়োইসারিওপসিস পারসোনেটা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। পডের পরিপক্কতা শুরু হলে এ রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে দাগগুলো বৃত্তের ন্যায় এবং আগাম দাগ রোগের চেয়ে বেশী গাঢ়। দাগগুলো কাল এবং দেখতে অনেকটা খসখসে। আক্রমন যখন বেশী হয় তখন প্রথমে পাতার সবৃজ রং নষ্ট হয়ে যায়, পড়ে শক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং সবশেষে পাতা ঝড়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও আগাম দাগ রোগের মত পাতার বোটা, কান্ড, উপপত্রসহ পেগেও ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বাটে দাগের সৃস্টি হয়।


চিনাবাদামের আগাম পাতার দাগ রোগ ও বিলম্বে আসা দাগ রোগের মধ্যে পার্থক্য হল আগাম দাগ রোগের ক্ষেত্রে দাগগুলো অপেক্ষাকৃত হাল্কা রং এর হয় এবং দাগের চতুর্দিকের সবুজ রং নষ্ট হয়ে গর্তের মত ক্ষতের সৃষ্টি করে।


প্রতিকার


১। ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।


২। এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে গাছে ব্যাভিষ্টিন ৫০ ডবিউপি ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে প্রতি ১০ দিন অমতর ২-৩ বার ছিটালে রোগের প্রকোপ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে ডাইথেন এম-৪৫ ও প্রতি লিটার পানির সাথে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। অথবা ফলিকুর প্রতি লিটার পানির সাথে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।


চিনাবাদামের মরিচা রোগ দমনঃ পাকাসিনিয়া এরাচিডিস নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। বিলম্বে আসা দাগ রোগ ও মরিচা পড়া রোগ সাধারণতঃ একই সাথে চিনাবাদামকে আক্রমণ করে। প্রাথমিক অবস্থায় পাতার নিচের পিঠে কমলা রঙের সামান্য উচুঁ বিন্দুর মত দাগ দেখা যায় এবং এটা ফেটে গিয়ে লাল-বাদামী রঙের স্পোর বের হয়ে আসে।


আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাতার উপরের পিঠেও এ দাগ দেখা যায়। ফুল বাদে মাটির উপরের যে কোন অঙ্গে দাগ দেখা যেতে পারে। তবে কান্ডের গায়ে সৃষ্ট দাগ লম্বাকৃতির হয়। মরিচা রোগে আক্রামত পাতাগুলোতে ধীরে ধীরে শক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে শুকিয়ে যায় এবং গাছের সাথে ঝুলমত অবস্থায় লেগে থাকে। গাছ এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রামত হলে চিনাবাদামের ফলন অনেক কমে যায়।


প্রতিকারঃ


১। এ জাতটির মরিচা পড়া রোগ সহ্য ক্ষমতা বেশী। তারপর ও এ রোগ দেখা দিলে ফলিকুর নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। অথবা ক্যালিক্সিন বা টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানির সাতে আধা মিলি হারে ১২ দিন অমত্মর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।


২। পূর্ববর্তী ফসল থেকে গজানো গাছ, আছাগা এবং নাড়া (খড়) পুড়ে ফেলে এ রোগের আক্রমণ কমানো যায়।


আষাঢ় মাসে চাষ করুন বিনাচিনাবাদাম-৭, ফলন আড়াই টন শিরোনামে সংবাদের তথ্য বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে নেওয়া হয়েছে।



Post Top Ad

Responsive Ads Here