অল্প পুঁজিতে মাছ চাষ পদ্ধতি | সময় সংবাদ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, জুন ১২, ২০২২

অল্প পুঁজিতে মাছ চাষ পদ্ধতি | সময় সংবাদ

 

অল্প পুঁজিতে মাছ চাষ পদ্ধতি | সময় সংবাদ
অল্প পুঁজিতে মাছ চাষ পদ্ধতি | সময় সংবাদ



কৃষি ডেস্ক:



একজন চাষির একটি পুকুর আছে। মাছচাষের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নাই তার জন্যই এ প্রযুক্তি। সাধারণভাবে আমরা জানি মাছচাষে মোট বিনিয়োগের ৬০-৭০ ভাগ হয় মাছের খাদ্য সরবরাহ করতে। সবমিলিয়ে অল্প পুঁজিতে লাভজনক গ্রাসকার্প মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে চাষিরা জানলে লাভবান হবেন।


অল্প পুঁজিতে লাভজনক গ্রাসকার্প মাছ চাষ পদ্ধতি মোট মাছের উৎপাদন কিছুটা কমে যেতে পারে কিন্তু চাষি পদ্ধতি অনুসরণে অবশ্যই লাভবান হবে।


এ পদ্ধতিতে কেবল গ্রাসকার্পকে নিয়মিত চাষি নিজের কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ঘাস সংগ্রহ করে পুকুরে দেবেন। গ্রাসকার্প সে খাবার খেয়ে বড় হবে পাশাপাশি এর মল অনেকাংশে সার হিসেবে কাজ করবে। এই সার পুকুরে অন্যান্য মাছের জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি করবে এবং মাছ তা খেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করবে।



 

গ্রাসকার্পের এই মল পুকুরে কেবল সার হিসেবে কাজ করবে না, মাছের মলে যে অপরিপাককৃত (Un digestible) ঘাস বা আংশিক পরিপাককৃত (Partially Digestible) ঘাস থাকে তা পুকুরের অন্যান্য মাছে (যেমন: সরপুঁটি, রুই, মৃগেল ও কার্পিও মাছ) সরাসরি খাবার হিসেবে গ্রহণ করে এবং বৃদ্ধি লাভ করে।


গ্রাসকার্প মাছের পরিচিতি

এ মাছটি বাংলাদেশে অনেক দিন আগে থেকে চাষ হচ্ছে। প্রধানত এ মাছ ঘাস খেয়ে দ্রুত বড় হয়। ঘাস খেয়ে বড় হয় বলেই সম্ভবত এ মাছের নামকরণ এরূপ হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে চাষের অধীনে (Aquaculture Based) উৎপাদিত মাছের একটি বড় অংশের অবদান কার্পজাতীয় মাছের এবং কার্পজাতীয় মাছের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি অবদান গ্রাসকার্প মাছের। একক প্রজাতি হিসেবে গ্রাসকার্প মাছের অবদান সর্বাধিক ১০.৫ ভাগ।


বাংলাদেশের মাছচাষে গ্রাসকার্প মাছের ভূমিকাও (১.৫৮%) কম নয়। অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল এ মাছটি বছরে ১-৩ কেজি পর্যন্ত বড় হয়। গ্রাসকার্প মাছটি যদিও ঘাস খেয়ে বড় হয় কিন্তু বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাছচাষ In Pond Raceway Aquaculture System (IPRAS). সেখানে এ মাছের চাষ হচ্ছে অধিক ঘনত্বে এবং বাণিজ্যিক ভাসমান খাবার দিয়ে। এ মাছটি বড় হলে আমাদের দেশীয় রুই মাছের মতো স্বাদ লাগে। এ জন্য এ মাছের বাজার চাহিদাও বেশ ভালো।


বর্তমান সময়ে সম্পূরক খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এ সময় গ্রাসকার্প চাষের বিষয়ে অগ্রাধিকার না দিয়ে উপায় নাই। এ মাছটি মৌসুমি বা বার্ষিক সব ধরনের জলাশয়ে চাষ করা যায়। হ্যাচারিগুলোতে এ মাছের পোনা পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদিত হয় এবং সারা দেশে এ মাছের পোনা পাওয়া যায়। মাছটি সুস্বাদু হওয়ায় এর বাজার চাহিদাও বেশি। মাছটি রাক্ষুসে স্বভাবের নয় বলে একক বা মিশ্র পদ্ধতিতে অন্যান্য মাছের সাথে চাষ করা যায়।



 

পুকুর নির্বাচন

ছোট বড় সকল পুকুরে এ মাছচাষ করা যায়। সাধারণত যে সকল পুকুরে আগাছা জন্মে বা ঘাস থাকে বিশেষ করে প্লাবনভূমিতে এ প্রজাতির মাছচাষ করা উত্তম। এ ছাড়া যেসব পুকুর নিজস্ব পুষ্টিতে উর্বর এবং পর্যাপ্ত ক্ষুদিপানা সৃষ্টি হয় সেসব পুকুর এ মাছ চাষের উপযোগী। প্রকৃতপক্ষে সকল পুকুরেই এ মাছ চাষ করা যাবে তবে বাইর থেকে সম্পূরক খাবার হিসেবে কলাপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের নরম কোমল ঘাস বা জলজ আগাছা সরবরাহ করতে হবে।


চাষের পুকুর প্রস্তুতি

অন্যান্য সকল মাছের চাষের জন্য যেভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে হয় সেভাবেই গ্রাসকার্প মাছ চাষের ক্ষেত্রেও একইভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। পুকুর পাড়ে বড় ছায়া প্রদানকারী গাছ না থাকাই ভালো। পুকুরের পাড় শক্তভাবে মেরামত করতে হবে যাতে বাইরের পানি পুকুরের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে। বেশি পুরাতন পুকুর হলে অবশ্যই শুকিয়ে নিতে হবে। গ্রাসকার্প মাছ যেহেতু অক্সিজেন স্বল্পতার প্রতি দুর্বল সে জন্য পুকুর প্রস্তুতে যত্নবান হতে হবে।


পুকুরের তলদেশে অধিক কাদা থাকলে অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুর শুকনো হলে এ পর্যায়ে পুকুরে পানি প্রবেশ করাতে হবে। এ সময় পুকুর প্রস্তুতের অংশ হিসেবে শতকে ০.৫ -১.০ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন বর্ষাকালে পুকুরের পাড়ের যে পর্যন্ত পৌঁছে সে পর্যন্ত ভালোভাবে

চুন ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরে চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর শতকপ্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৪-৫ দিন পরে মাছের পোনা ছাড়তে হবে ।


মাছের পোনা মজুদ

ভালো হ্যাচারি থেকে সংগৃহীত রেণু থেকে উৎপাদিত ভালোমানের পোনা নির্বাচন চাষের সফলতার পূর্বশর্ত। কেজিতে ৪-৬টি আকারের পোনা সংগ্রহ করে চাষের পুকুরে ছাড়লে উত্তম ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। ছোট আকারের পোনা ছাড়লে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। সাধারণত কার্প মিশ্র চাষে প্রতি শতকে অন্যান্য কার্পজাতীয় মাছের সাথে মাত্র ১টি গ্রাসকার্প ছাড়া হয়।


গ্রাসকার্প মাছের খাদ্য

গ্রাসকার্পের প্রধান খাবার বিভিন্ন ধরনের কোমল ঘাস। সম্পূরক যেকোনো খাবারও এ মাছ খায়। দুধের গরুকে যে নেপিয়ার বা অন্যান্য আমিষ সমৃদ্ধ ঘাস খাওয়ানো হয়, সেসব ঘাস এ মাছে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশের হাজামজা পুকুরে প্রচুর পরিমাণে ক্ষুদিপানা, ইদুরকানি জন্মে যা এ মাছের অন্যতম প্রধান খাবার। কলাগাছের পাতা, ফুলকপি-বাঁধাকপির কচিপাতা গ্রাসকার্প মাছের অত্যন্ত প্রিয় খাবার।



 

পুকুরে মাছের খাদ্য প্রদান পদ্ধতি

গ্রাসকার্পকে আমরা খাবার দেবার সময় সাধারণত বিশেষ কোন আলাদা যত্ন নেয়া হয় না। ক্ষুদিপানা, ইদুরকানি বা ছোট আকারের ঘাস সংগ্রহ করে সরাসরি পুকুরে সরবরাহ করলেই হবে। এক দিনে ২-৩ দিনের পরিমাণ খাবার দেয়া যেতে পারে। বড় ঘাস হলে বা কলাপাতা হলে কেটে ছোট করে দিতে হবে যাতে মাছ সহজে খেতে পারে।


বিশেষ করে পুকুরে বাঁশ বা বাঁশের ফালি দিয়ে চার কোণা বেড় তৈরি করে দিলে ঘাস পুকুরে ছড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা করা যায়। মাত্র ৬-৭ মাস এভাবে চাষ করলে নিশ্চিত প্রতিটি মাছের ওজন বেশি হবে। একটি ৩০ শতকের পুকুরে অন্যান্য মাছ ছাড়া কেবল গ্রাসকার্প মাছের উৎপাদন হবে কমপক্ষে ৫০০ কেজি। মাছের সর্বনিম্ন ১০০ টাকা দরে বিক্রয় করলেও কেবল গ্রাসকার্প থেকেই আয় হবে ৫০ হাজার টাকা।


মাছ চাষে সতর্কতা

গ্রাসকার্প মাছচাষের সময় নিম্নে উল্লিখিত বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় অসচেতনতার কারণে মাছচাষে চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। যেমন :


গ্রাসকার্প ঘাস খায় কিন্তু শুকনা বা শক্ত খসখসে,


কাটাযুক্ত ধারাল ঘাস খাবার হিসেবে দেয়া যাবে না;


গ্রাসকার্প মাছ পানির উপরে বা কিনারে এসে ঘাস খায় এ জন্য অনেক সময় শিকারি পাখি বা প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হয় সে জন্য এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে;


মাছ চাষ চলাকালে অনেক সময় পুকুরে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয় এ সময় অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় গ্রাসকার্প মাছ বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বড়গুলো মারা যেতে পারে।


এ জন্য পুকুরে দ্রবণীয় অক্সিজেন এর ঘাটতি না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। দ্রবীভূত অক্সিজেনের অভাব হলে দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে; প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘাস দেয়া হলে সে ঘাস পচে পুকুরে ক্ষতিকর গ্যাস তৈরি হয় এবং পুকুরে পরিবেশ নষ্ট হয়, মাছ পীড়ন অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে। এ জন্য অতিরিক্ত ঘাস দেয়া যাবে না।


২-৩ দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলতে পারে সেই পরিমাণের বেশি ঘাস দেয়া যাবে না; ঘাসের শক্ত উচ্ছিষ্ট অংশ পুকুরে জমতে দেয়া যাবে না, মাঝে মধ্যে অপসারণ করতে হবে, অন্যথায় এ সব দ্রব্য পচে পুকুরের সার্বিক পরিবেশের ক্ষতি হয়ে মাছ পীড়ন অবস্থার সম্মুখীন হতে পার; ধানী জমিতে ধানের সাথে এ মাছ চাষ করা যাবে না। এ মাছে ধানের গাছ খেয়ে ক্ষতি করতে পারে।


বিশ্বে মাছ উৎপাদনে কার্প এর অবস্থান সর্বোউপরে এবং গ্রাস কার্পের অবস্থান তার মাঝে অন্যতম। অর্থাৎ কার্পজাতীয় মাছচাষ সবচেয়ে সহজ বলেই এ মাছচাষ বেশি হয়। অনেকের পুকুর আছে কিন্তু পুঁজির ও সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে অব্যবহৃত থেকে যায়। সাধারণভাবে মনে করে পুকুর থাকলে হবে না মাছচাষ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। আজকের আলোচনা থেকে সহজেই বোধগম্য হবে যে পুঁজি নয় কেবল কায়িক পরিশ্রম দিয়েও মাছ চাষ করা যায়।


Post Top Ad

Responsive Ads Here