![]() |
| গুচ্ছগ্রামে বন্দী ২৬ হাজার বাঙালির পুনর্বাসনের দাবি পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের |
মো. নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:
পার্বত্য চট্টগ্রামে গুচ্ছগ্রামে বন্দী অবস্থায় থাকা ২৬ হাজার বাঙালি অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)। সংগঠনটি বলেছে, বাঙালি প্রতিনিধি ছাড়া এবং বাঙালি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত ব্যতীত টাস্কফোর্সের একপাক্ষিক সভা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজমের যৌথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
পিসিসিপির নেতৃবৃন্দ জানান, আগামী ২২ অক্টোবর (বুধবার) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে “ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স”-এর ১২তম সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সভায় বিগত সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা সভাপতিত্ব করবেন।
তারা অভিযোগ করেন, টাস্কফোর্সে একমাত্র বাঙালি প্রতিনিধি এডভোকেট মহিউদ্দীন কবীর পদত্যাগ করলেও, বাকি সদস্যরা এখনও দায়িত্বে আছেন এবং শূন্যপদে নতুন কোনো বাঙালি প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে বাঙালি প্রতিনিধিবিহীন এ সভা সংবিধান ও প্রশাসনিক ন্যায়ের পরিপন্থী বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
পিসিসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে প্রথম টাস্কফোর্স অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংজ্ঞা নির্ধারণ করে জানায়— ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯২ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতের কারণে যারা নিজ বসতি ত্যাগ করে দেশের অন্যত্র চলে গেছেন, তারাই অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে গণ্য হবেন।
পরে ২০০০ সালে সরকারি শুমারিতে দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট ১ লাখ ২৮ হাজার ৩১৪টি পরিবারকে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে ৩৮ হাজার ১৫৬টি পরিবার বাঙালি এবং ৯০ হাজার ২০৮টি উপজাতীয় পরিবার।
বিবৃতিতে সংগঠনটি আরও জানায়, শান্তিচুক্তির আগে নিরাপত্তাজনিত কারণে ১৩০টি গ্রাম থেকে প্রায় ২৬ হাজার বাঙালি পরিবারকে সরিয়ে এনে ৬৮টি গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। কিন্তু এত বছর পরও তাদের নিজ জমিতে পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার বা টাস্কফোর্স কমিটি।
পিসিসিপির দাবি, “টাস্কফোর্সের আসন্ন বৈঠকে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বাঙালিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে, যা পার্বত্য এলাকায় নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।”
সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি জানানো হয়—
১. ২৬ হাজার বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবারকে তাদের কবুলিয়তপ্রাপ্ত জমিতে পুনর্বাসন করতে হবে।
২. বাঙালি প্রতিনিধি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত টাস্কফোর্সের কোনো বৈঠক বৈধ হবে না।
৩. বর্তমান টাস্কফোর্স বাতিল করে নতুনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫২% বাঙালি জনগোষ্ঠীর মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
৫. ভারতীয় বা মিয়ানমারের নাগরিকদের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে পুনর্বাসনের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।
৬. ২২ অক্টোবরের নির্ধারিত টাস্কফোর্স বৈঠক অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
পিসিসিপি নেতারা আরও বলেন, পাহাড়ের ন্যায্য অধিকার আদায়ে তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবি উপেক্ষা করা হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

