নাফ নদে জেলে অপহরণে আতঙ্ক, সীমান্তে বাড়ছে আরাকান আর্মির প্রভাব
মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদ এখন জীবিকা নয়, ভয়-আতঙ্কের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন জীবিকা নির্বাহ করতে নাফে নামা বাংলাদেশি জেলেরা অধিকাংশ দিনই বাড়ি ফিরে না আসার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে—কারণ সীমা লঙ্ঘনের অজুহাতে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী, আরাকান আর্মি।
পাওয়া তথ্যে, ৫ থেকে ২৮ আগস্ট মোট ৬৯ জন জেলে আরাকান আর্মির হাতে পড়ে; তার মধ্যে ১৭, ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ আগস্টে কয়েক ধাপে ব্যাপক গ্রেপ্তার রিপোর্ট করা হয়েছে। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর আরও দুটি ট্রলারসহ ১৪ জন জেলে অপহৃত হওয়ার খবর আসে। উল্লেখ্য, ১২ সেপ্টেম্বর ঘটোনো একটি ঘটনায় ৫টি ট্রলারে থাকা ৪০ মাঝিমাল্লা অপহৃত ছিল—তার মধ্যে এক ট্রলারের ১৭ জন জেলে কৌশলে পালিয়ে আসেন। অতীতের অপহরণগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে আরাকান আর্মির হাতে বর্তমানে আনুমানিক ১১৪ জন জেলে বন্দি বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে; একই সঙ্গে ১৯টি ট্রলারও আটক রয়েছে।
কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার সালাউদ্দিন রশিদ তানভির জানিয়েছেন, বেশিরভাগ জেলে মাছ ধরতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমারের পানিসীমায় চলে যান; ফলে তারা আটকা পড়েন এবং পরে আটক করা হয়। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে আটক ব্যক্তিদের জাতীয়তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এবং বাংলাদেশের জলসীমায় কাউকে আটক করতে তাঁরা দখলদারকে প্রবেশ করতে দেবেন না।
কক্সবাজার রামুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন বলেছেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে মাদক ও মানব পাচারের সম্পর্ক থাকতে পারে এবং মিয়ানমারে স্থিতিশীল কোনো সরকার না থাকায় কূটনৈতিক আলাপচারিতা প্রায়শই জটিল। তবু বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বলে আসছে তারা সবসময়ই জেলেদের উদ্ধার ও নিরাপত্তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নাফ নদে আরাকান আর্মির এই ধরনের অভিযান কেবল সীমান্তবিষয়ক ঘটনাই নয়—এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি। আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সীমান্ত নদীগুলোতে শান্তিপূর্ণ চলাচলের অধিকার থাকা সত্ত্বেও, রাখাইন অঞ্চলে আরাকান বাহিনী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর থেকে জলসীমা ও মৎস্য আহরণকারীদের ওপর সীমাহীন বাধ্যবাধকতা দেখা যাচ্ছে।
জানজটপূর্ণ প্রসঙ্গে প্রশ্নটি জাগে: ফিরে আসবে কি এই জেলেরা — এবং তাদের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে? অতীতের ইতিহাসও স্মরণ করাচ্ছে—২০০০ সালের নাফ-সংঘর্ষে বাংলাদেশ সামরিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে মিয়ানমারকে পিছু হটিয়েছিল। এখন আবার সেই স্মৃতিচারণা নতুন করে আলোচনায় এসেছে—তবে বর্তমান পরিস্থিতি কূটনৈতিক, মানবিক ও নিরাপত্তা বিবেচনায় ব্যতিক্রমীভাবে জটিল।
অপহৃত জেলেদের পরিবারগুলো এখনই আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিনযাপন করছেন; স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী কূটনৈতিক মাধ্যমে ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে যেন দ্রুত ও নিরাপদভাবে সব আটককৃত জেলে ফিরিয়ে আনা যায়।