![]() |
সংকটে দেশের পোশাক খাত: একের পর এক কারখানা বন্ধ, বেকার হচ্ছেন শ্রমিকরা |
মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্প মারাত্মক সংকটে পড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকঋণের জটিলতা, কার্যাদেশ কমে যাওয়া ও শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে লাখো শ্রমিক চাকরি হারিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখার কৌশল পুনর্গঠন করা এখন জরুরি। অন্যথায় দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত আরও বড় ধাক্কায় পড়তে পারে।
বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান:
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে প্রায় এক লাখ ৯ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন। একই সময়ে ১৬৫টি নতুন কারখানা চালু হলেও সেগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৯৭ হাজার জনের মতো। ফলে নেট হিসাবে অন্তত ১১ হাজার শ্রমিক কর্মহীন থেকে গেছেন।
তবে শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। তাদের হিসাবে, গত এক বছরে পোশাকসহ মোট ২৫৮টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি কারখানা সরাসরি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বন্ধ হয়, যেগুলোর মালিক আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী ছিলেন।
বন্ধ হওয়ার কারণ:
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে কারখানা বন্ধের প্রবণতা বাড়ে। এর প্রধান কারণ—
-রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও মালিকদের বিদেশে অবস্থান
-ব্যাংকঋণ ও এলসি জটিলতা
-বৈদেশিক ক্রেতাদের কার্যাদেশ কমে যাওয়া
-শ্রমিক অসন্তোষ
সংকটের মধ্যেও গত এক বছরে পোশাকসহ ২৬৫টি নতুন কারখানা চালু হয়েছে বলে জানায় শিল্প পুলিশ। এতে প্রায় ৬২ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। একইভাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডাইফি) তথ্যে দেখা যায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৯৩৭টি নতুন কারখানা চালু হলেও একই সময়ে ২৪৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
গত এক বছরে অন্তত ১৩০টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে এখনো ৩৪টি কারখানা অস্থির অবস্থায় রয়েছে। মজুরি কাঠামো, বকেয়া বেতন ও কর্মপরিবেশের সমস্যার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাব এই অসন্তোষকে আরও বাড়িয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “চল্লিশ বছরের পুরনো এই খাত এখনো অস্থির অবস্থায়। রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও টাকাপাচার থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।”
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মাশরুর রিয়াজ মনে করেন, “দুই শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। অথচ বৈশ্বিক বাজারে এখন রপ্তানির নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সময়ে যদি বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়, তাহলে পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক খাতের সংকট সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, নীতি সহায়তা দেওয়া এবং শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। নইলে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে।