সময় সংবাদঃ-
অভাব অনটনের মধ্যেও ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে বিসিএস ক্যাডার বানিয়েছেন মা। লোকের বাড়িতে কাজ করে আর রাতে কাপড় সেলাই করে সেই ছেলেকে পড়িয়েছেন। তবে ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়ে তা ভুলে গেছে বেমালুম।
তাইতো গর্ভধারিনী মাকে রেলস্টেশনে ফেলে রেখে গেছেন তিনি। বউ ম্যাজিস্ট্রেট তাই সেই ফ্যামিলির সঙ্গে মাকে খাপ খাওয়াতে পারছেন না ছেলে। বউয়ের অনুরোধে এমন কাজ করেছে ভীতু ও অকৃতজ্ঞ সেই ছেলে। সঙ্গে একটি চিঠিও লিখে গেছেন মাকে। এমন একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি ঘটনাটি ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন ব্যারিস্টার এস এম ইকবাল চৌধুরী। এর পর থেকেই সেটি ভাইরাল হতে শুরু করে।
তার পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
‘কয়েকদিন পর্যন্ত শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। ব্লাডপ্রেসার ডিস্টার্ব করছে। আর বন্ধুরা বলে, আমার মাথার মাদারবোর্ড নাকি কাজ করছে না- হা হা হা। তারপরও রেলস্টেশন গিয়ে দু’জন হাঁটাহাঁটি করছি। কারণ আমাদের একজন সিনিয়র কলিগকে রিসিভ করতে অর্থাৎ ট্রেনের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর একটি জায়গায় বসে আছেন এক বৃদ্ধা, যার বয়স সত্তর।’
তিনি বললেন,আমার একমাত্র ধন (ছেলে)। তার সঙ্গে একটা ছোট ব্যাগ আছে। আমরা তার অনুমতি নিয়ে ব্যাগের বাহ্যিক পকেটে হাত প্রবেশ করালাম যাতে কোনো ফোন নম্বর পাওয়া যায় কিনা। একটি চিঠি পেয়েছি তাতে কী লেখা ছিল নিম্নে সন্নিবেশিত।
মা, জানি তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ, কারণ তোমার কষ্টার্জিত টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি আর এখন সরকারী কর্মকর্তা। অথচ তোমাকে শেষ পর্যন্ত রাখতে না পেরে রেলস্টেশনে রেখে চলে যাচ্ছি। তোমার খোকা বিয়ে করেছে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে, সে তোমাকে মেনে নিতে চায় না। আমি নিরুপায় হয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি, জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাস আর আমার ভালবাসা তোমার বৌমার নিকট আত্মসমর্পণ করেছে।
ক্ষমা করিও না আমায় মা, খোকা।
ততক্ষণে ট্রেন উপস্থিত আর অতিথিসহ সিদ্ধান্ত নিলাম মাকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করিয়ে দেয়ার। স্টেশন মাস্টারের রুমে প্রবেশ করে নিজেদের পরিচয় দিলে তিনি যথার্থ সম্মান দেন। পরে আমরা মায়ের দুর্ঘটনার কথা বলাতে তিনি মাকে নিজ চেয়ারে বসালেন।
মায়ের সন্তান একজন বিসিএস কর্মকর্তা। লোকের বাড়িতে কাজ করে আর রাতে কাপড় সেলাই করে বিসিএস ক্যাডারকে পড়িয়েছেন। আমি চেয়েছিলাম, সেই বদমাশ ছেলের নামসহ বিস্তারিত তুলে ধরতে। কিন্তু মায়ের অনুরোধ যাতে তা না করি। মায়ের মতে, সন্তান ও বৌমা ম্যাজিস্ট্রেট আর তাদের সামাজিক মর্যাদা আছে। হায়রে মা…সন্তানের সম্মান মায়ের কাছে কতো মূল্য আর কুলাঙ্গারের কাছে মা কতো ‘বিপদ’!!
মায়ের বর্তমান ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। তাকে বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করার সময় অভিভাবকের কলামে আমার নাম লিখাতে পেরে গর্বিত।
একদিন বৃদ্ধাশ্রম থেকে ফোন আসলে রিসিভ করি। অপর প্রান্তে মায়ের কণ্ঠে- ‘খোকা, আমার মন ভালো নেই, যদি পারো একটু দেখতে এসো।’ছুটে গেলাম জননীর কাছে। খোকা হয়ে তখন দেখি মাকে ডাক্তার অবজারভেশনে রেখেছেন। মায়ের কপালে হাত রাখতেই তিনি চোখ খুলে মুচকি হেসে পানি চাইলেন এবং আমি তাকে পানি খাওয়াই।
তিনি বলেন, খোকা বেঁচে থাকবি সিংহ হয়ে। একদিন মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে জান্নাতগামী হলেন।
গতমাসে ঘটনাটি ঘটলেও আজ (২৯ মার্চ) এ বিষয়ে লিখছি কারণ চোখের ঝর্ণাপ্রবাহ লেখার ক্ষমতাকে প্লাবিত করে যার ফলে বারবার বাধা পাচ্ছিলাম। কোনো মায়ের পরিণতি যেন এমন না হয়।
