হবিগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় মুক্ত দিবস পালিত - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৮

হবিগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় মুক্ত দিবস পালিত

আজিজুল ইসলাম সজীব,হবিগঞ্জ প্রতিনিধি-১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল হবিগঞ্জ জেলা সদরসহ নবীগঞ্জ উপজেলা এবং  চুনারুঘাট উপজেলা।হবিগঞ্জ জেলায় ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধে হবিগঞ্জ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। 

একাত্তরের ৪ এপ্রিল মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া ডাকবাংলো থেকে সারা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। ৩ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন মেজর শফিউল্লাহ। শফিউল্লাহর নেতৃত্বে হবিগঞ্জের সীমান্ত এলাকার দুর্গম অঞ্চল গুলোতে ঘাতক পাকিস্তানিদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ডিসেম্বরের শুরুতেই মুক্তিযোদ্ধারা জেলা সদরে শহরের কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। হবিগঞ্জের  প্রবেশের ৩দিকে থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একসাথে  পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণ করে। পরে ৫ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা হবিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন এবং ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকিস্তানি সেনাসহ কলঙ্কিত দালাল রাজাকারেরা আত্মসমর্পণ করে। 
হবিগঞ্জের ইতিহাসে এই দিনে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের নেতা মোঃ শাহাজাহান মিয়াসহ মুক্তিযোদ্ধারা হবিগঞ্জ সদর থানা কম্পাউন্ডে বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। 
মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ জেলার অসংখ্য নিরীহ মানুষ হানাদারদের নিষ্ঠুরতার শিকার হন। শহীদদের স্মৃতিরক্ষার জন্য ক্ষেত্রে তৈরী করা হয়েছিল মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া, বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ, লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর, চুনারুঘাট উপজেলার নলুয়া চা-বাগান, বানিয়াচঙ্গ উপজেলার বদলপুর এবং মাকালকান্দির বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। 
চুনারুঘাট ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে চুনারুঘাটের সীমান্ত এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ তোরাব আলী খন্দকার, শামছুল হুদা এবং আব্দুল গফফারের নেতৃত্বে কয়েক শত  মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা শহরে পাকিস্তানি ক্যাম্পে এক সাথে আক্রমণ চালিয়ে ছিলেন । 
৬ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানি দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আস্তানা গুঁটিয়ে চুনারুঘাটের দিকে চলে আসে এবং পাক-সেনারা শ্রীমঙ্গলের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। 
৬ ডিসেম্বর সকালে তৎকালীন সিও অফিসের সামনে প্রথম উত্তোলন হয়েছিল। বাঙ্গালীদের পক্ষে স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সানু মিয়া চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছামাদ পিসিও, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নান সরকারসহ অসংখ্য বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই।

নবীগঞ্জ
আজ ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। এই দিন পূর্বাকাশের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীদের হটিয়ে দিয়ে মুক্ত করেছিল নবীগঞ্জ শহরকে। 

৩দিনের সম্মুখ যুদ্ধের পর সেদিন সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ আগে নবীগঞ্জ থানা সদর হতে পাক হানাদার বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করে মুহুমুর্হু গুলি ও জয় বাংলা শ্লোগানের মধ্যে বীরদর্পে এগিয়ে আসে কয়েক হাজার মুক্তিকামী জনতা। এ সময় মাহবুবুর রব সাদীর নেতৃত্বে থানা ভবনে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের পতাকা।পরে স্থানীয় ডাকবাংলো সম্মুখে হাজার হাজার জনতার আনন্দে উদ্বেলিত ভালবাসায় সিক্ত মাহবুবুর রব সাদী আবেগ জড়িত কণ্ঠে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন এবং ওই দিন বিকালে বাহিনীসহ সিলেট রওয়ানা দেন।৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। বিভিন্ন সময় পাক বাহিনীর উপর গেরিলা হামলা চালিয়ে তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখে মুক্তি সেনারা। কৌশলগত কারণে নবীগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা নবীগঞ্জ থানা দখলের সিদ্ধান্ত নেয়। নবীগঞ্জে পাক বাহিনীর অন্যতম ক্যাম্প নবীগঞ্জ থানাকে লক্ষ্য করে তিনদিকে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর রাত থেকে ক্ষণে ক্ষণে গুলি বিনিময় চলে উভয়ের মধ্যে। মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে ও আত্মরক্ষার্থে কখনোও পিছু হটা, আবার কখনোও আক্রমণ চালিয়ে পাক বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে থাকে। সারাদেশে পাক বাহিনীর অবস্থান খারাপ হওয়ায় নবীগঞ্জেও তাদের খাদ্য এবং রসদ সরবরাহ কমে যায়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনী একেক সময়ে একেক দিক দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর রাতে থানা ভবনের উত্তর দিকে রাজনগর গ্রামের নিকট থেকে মুক্তিযোদ্ধা রশিদ বাহিনী পাক বাহিনীর উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর কিশোর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব ৪ ডিসেম্বর শহীদ হন।পরদিন ৫ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা চরগাঁও ও রাজাবাদ গ্রামের মধ্যবর্তী শাখা বরাক নদীর  দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান নেয়। প্রায় ৩ ঘণ্টা ব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধের পর শক্র বাহিনী পালিয়ে যায়। পরদিন ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাক বাহিনীর নিকট থেকে কোন বাধা না আসায় মুক্তিবাহিনী বীরদর্পে জয়বাংলা শ্লোগানের মধ্য দিয়ে থানা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জ উপজেলাকে মুক্ত ঘোষণা করেন।এদিকে, গত ৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) ছিল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব’র ৪৭ তম শাহাদাত বরন দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নবীগঞ্জ শহর মুক্ত করতে পাক হানাদারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন এই বীর সেনানী। 
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এই বীর শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কিংবা তার শাহাদাত বার্ষিকী পালন করতে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। অযতœ আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই বীর সেনানীর শেষ স্মৃতি সমাধিটুকুও।

Post Top Ad

Responsive Ads Here