অবৈধ বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ০৩, ২০১৯

অবৈধ বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে

সময় সংবাদ ডেস্ক//
এদেশে ক্রমাগত অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দেশে ৩০ লাখেরও বেশি বিদেশি বসবাস করছে। তার মধ্যে ১০ লাখের বেশি বিদেশি শ্রমিক অবৈধভাবে কাজ করছে। আর পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শ্রমিক কাজ করে। যদিও একটি গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব বলছে, অবৈধভাবে দেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার ৭১৩ জন। আর বৈধভাবে দেশে অবস্থান করছে প্রায় ৬১ হাজার। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করে। তারা তাদের দেশে এক বছরে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান। তাছাড়া ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার তাদের গবেষণায় উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকেরা বৈধ পথে বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় নিয়ে যায়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে এসব বিদেশি নাগরিক কাজ করে। সরকারের একাধিক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রোহিঙ্গা, বিহারি এবং অবৈধ বিদেশি মিলিয়ে এদেশে বিদেশির সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। মূলত নজরদারি অপেক্ষাকৃত কম থাকায় বিদেশিরা পর্যটন ভিসায় এসে পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে এদেশে থেকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসীদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য দ্রুততর সময়ের মধ্যে অভিবাসী নিয়ে একটি বিশেষায়িত সংস্থা গঠন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিহারিদের যন্ত্রণা সহ্য করছে। এবার যোগ হয়েছে বিশাল রোহিঙ্গা-বহর। অবৈধ বিদেশির সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশের অর্থনীতিতে চাপ পড়ছে। তাছাড়া অবৈধ বিদেশিরা দেশে অবস্থান করে নানা অপকর্মে জড়াচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে কাজ করায় বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র। অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারীদের মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া, ঘানা, কঙ্গো, তাইওয়ান, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, চীন, তানজানিয়া, আফ্রিকা, উগান্ডা ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকরাই বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫টি দেশের নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করলেও গত আগস্ট পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে ভারতের ১০ হাজার ২২৭ জন, চীনের ৩ হাজার ৬৫২, নেপালের ১ হাজার ৫১৮, পাকিস্তানের ৪২১, শ্রীলঙ্কার ৫৩৪, রাশিয়ার ৩৪৮, দক্ষিণ কোরিয়ার ৬১০, উত্তর কোরিয়ার ৪০৬, সোমালিয়ার ১২২, যুক্তরাষ্ট্রের ৪১৫ এবং যুক্তরাজ্যের ২০৩ জন অবৈধ নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছে। 

সূত্র জানায়, গার্মেন্ট, কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল, ওভেন ও নিটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি, সোয়েটার ফ্যাক্টরি, বায়িং হাউস, মার্চেন্ডাইজিং কোম্পানি মিলিয়ে পোশাক খাতে প্রায় ১০ লাখ বিদেশি কাজ করে। যদিও অধিকাংশ বিদেশিই অবৈধভাবে এদেশে কাজ করছেন। তাছাড়া ফ্যাশন হাউস, খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানি, ফার্নিচার কোম্পানি, পোলট্রি খাদ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, চামড়াজাত প্রতিষ্ঠান এবং রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে অনেক অবৈধ বিদেশি কাজ করছে। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রকৃত রোহিঙ্গার সংখ্যা কত তা নিয়ে নানা কথা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ২৫৯ জন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাব (আগস্ট পর্যন্ত) অনুযায়ী, রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ১৩ হাজার ৮০ জন। তার মধ্যে রেজিস্টার্ড ৩৪ হাজার ৬৬৫ জন এবং গণনাকৃত ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৪১৫ জন। আর স্থানীয় সূত্র মতে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা এখন ১৫ লাখের বেশি। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা ১৯৭৮ সাল থেকে কয়েক ধাপে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাছাড়া ১৯৯২ সালে মক্কাভিত্তিক রাবেতা আল ইসলাম নামে একটি এনজিও বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষী বিহারিদের ওপর জরিপ পরিচালনা করে। জরিপ অনুযায়ী, ওই সময় দেশের ১৭ জেলার ৭০টি ক্যাম্পের বিহারী জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ সাড়ে ৩৭ হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, এদেশে বিদেশি নাগরিকদের কাজের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও এনজিওবিষয়ক ব্যুরো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অনুমতি বিডার কাছ থেকে নেয়া হয়। বিগত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিডায় নতুন ও মেয়াদ বৃদ্ধিসহ নিবন্ধিত শ্রমিক প্রায় ২৩ হাজার ৮৫৪ জন। তার মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোতে আড়াই হাজারের মতো বিদেশি নাগরিক কাজ করে। তাছাড়া এনজিও ব্যুরোর অনুমতি নিয়েও কাজ করা বিদেশি কর্মীর সংখ্যা পাঁচশরও বেশি। আর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে বাংলাদেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন বলে তথ্য দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এদিকে বাংলাদেশে ৮৫ হাজারের বেশি নিবন্ধিত বিদেশি ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তাদের মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার বিদেশি আয়কর দেন। অর্থাৎ বাকি সাড়ে ৭২ হাজার বিদেশি কর ফাঁকিতে জড়িত। কর্মরত বিদেশিদের প্রতিবছর ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের ৩০ শতাংশই নিয়ে যাচ্ছে বিদেশিরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী দেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কর্মরত থাকলেও বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত ঢাকার কর অঞ্চল-১১-তে প্রায় ১৩ হাজার বিদেশি রিটার্ন জমা দেন। এটিকে বিদেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

অন্যদিকে সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসী বিসয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, এ বিষয়টি মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখে থাকে। 

বিদেশি কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র ম ল জানান, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত শিল্প অধিশাখায় নতুন এবং মেয়াদ বৃদ্ধিসহ মোট ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে ১৪ হাজার ৯১ জন কর্মীর। তাছাড়া একই সময়ে বাণিজ্য অধিশাখায় নতুন এবং মেয়াদ বৃদ্ধিসহ মোট ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে ৯ হাজার ৭৬৩ জন কর্মীর।

Post Top Ad

Responsive Ads Here