![]() |
| পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ কাপ্তাই হ্রদের হাউজবোট, জনপ্রিয়তায় শীর্ষে |
মো. নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার:
পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি আর নীল জলের অপূর্ব সমন্বয়ে দেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য রাঙ্গামাটি। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। কালের পরিক্রমায় কাপ্তাই হ্রদে পর্যটন অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা—হাউজবোট।
একসময় কাপ্তাই হ্রদে পর্যটকদের ভরসা ছিল ট্যুরিস্ট বোট। এখন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত হাউজবোট হয়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দ। খোলা ছাদে বসে হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এসব হাউজবোটে রয়েছে বেডরুম, বেলকনি, রেস্তোরাঁসহ আধুনিক সব সুবিধা। ভাসমান এই নৌকাগুলো যেন একেকটি চলমান হোটেল।
দিনের আলোতেই নয়, পূর্ণিমা রাতের জ্যোৎস্নাতেও হাউজবোটে ভেসে বেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা। সুবলং ঝরনা, ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, বনভান্তের স্মৃতি মন্দির, রাজবন বিহার ও চাকমা রাজার বাড়িসহ রাঙ্গামাটির প্রায় সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে হাউজবোটে।
হাউজবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে ১৫টি হাউজবোট পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি হাউজবোটে আধুনিক শৌচাগার, ডাইনিং সুবিধা, দাবা, লুডু ও কেরামসহ বিনোদনের নানা আয়োজন রয়েছে। খাবারের ব্যবস্থাও সমৃদ্ধ—সকালে খিচুড়ি, ডিম ও চা, দুপুরে ভাত, বাঁশে রান্না করা মুরগি, সবজি, ডাল ও সালাদ, বিকেলে হালকা নাশতা এবং রাতে বারবিকিউ পরিবেশন করা হয়। পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী পাহাড়ি সবজি ও হ্রদের মাছও যোগ করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণে আসা পর্যটক মো. ফুহাদ আলম বলেন, “রাঙ্গামাটিতে আগেও এসেছি, তবে হাউজবোটে ভ্রমণ একেবারেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা। রাতযাপন, খাবার ও বিনোদন—সব মিলিয়ে দারুণ সময় কাটে। পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণের জন্য হাউজবোট খুব ভালো মাধ্যম।”
হাউজবোটে একদিন এক রাত কিংবা দুই দিন এক রাতের বিভিন্ন প্যাকেজে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। সাধারণত একটি হাউজবোটে ছয়টি কক্ষে ১২ জন থাকার ব্যবস্থা থাকে। খাবারসহ এক রাত এক দিনের প্যাকেজে ২৫ জন পর্যটকের জন্য ভাড়া পড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। খাবার ছাড়া শুধু বোট ভাড়া ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং দুই দিন এক রাতের পূর্ণ প্যাকেজে খরচ হয় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
হাউজবোটের চাহিদা বাড়ায় নতুন উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসছেন। উদ্যোক্তা বনকুসুম বড়ুয়া বাপ্পী জানান, “কাপ্তাই হ্রদের হাউজবোট পর্যটকদের কাছে নতুনত্ব এনে দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় এখনো হাউজবোট কম। তাই নতুন বোট তৈরির কাজ চলছে। শিগগিরই আরও কয়েকটি হাউজবোট পর্যটকদের জন্য চালু হবে।”
হাউজবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে ১৫টি হাউজবোট রয়েছে। পর্যটকদের কাছ থেকে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে এই খাতে সুনির্দিষ্ট তদারকি ও ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বিত সহযোগিতা পেলে কাপ্তাই হ্রদের পর্যটন আরও বিকশিত হবে।”

