![]() |
| অর্ধশত বছরের পরিত্যক্ত ভবনের ঝুঁকিতে আমতলী আদালতের বিচারপ্রার্থীরা |
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার আমতলী উপজেলায় অর্ধশত বছরের পুরনো পরিত্যক্ত দুটি দ্বিতল ভবনের ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আগত প্রায় ২০ হাজার বিচারপ্রার্থী। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এসব বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মাঝখান দিয়ে আদালতে যাতায়াত করছেন। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষ মেশিনারি যন্ত্রাংশ সংরক্ষণের জন্য আমতলী আদালত সংলগ্ন এলাকায় দুটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করে। ভবন দুটি প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা প্রশাসন পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও আজ পর্যন্ত তা অপসারণ করা হয়নি। বর্তমানে ওই ভবন দুটির মাঝখান দিয়েই আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল প্রবেশপথ।
দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত থাকায় ভবন দুটির অবস্থা এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ইট-পাথর ও বিম খসে পড়ছে, দেয়ালে জন্ম নিয়েছে পরগাছা। দিনেও ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে মানুষ ভয় পাচ্ছে। যেকোনো সময় ভবন ধসে পড়ে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিচারপ্রার্থী ও স্থানীয়রা।
সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ভবন দুটির ভগ্নদশা চোখে পড়ার মতো। আদালতের প্রবেশপথ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।
বিচারপ্রার্থী আব্দুল মাজেদ মাস্টার বলেন, “আদালতের সামনে এভাবে পরিত্যক্ত ভবন থাকা যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনি এটি আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। দ্রুত অপসারণ করা প্রয়োজন।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং বিচারপ্রার্থীদের জন্য বড় হুমকি তৈরি করেছে।”
আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের পেশকার মো. আবুবকর বলেন, “প্রবেশপথের দুই পাশে থাকা পরিত্যক্ত ভবন দুটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এতে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।”
আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুহু-উল আলম নবীন বলেন, “বিএডিসির পরিত্যক্ত ভবন দুটি বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের জন্য স্থায়ী আতঙ্ক। কখন কী ঘটে যায়, কেউ জানে না।”
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা বিএডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, “ভবন দুটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কেন অপসারণ করা হয়নি, তা আমার বোধগম্য নয়।”
বরগুনা জেলা বারের সদস্য ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “বহুবার উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের জীবন ঝুঁকি লাঘব করা জরুরি।”
আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, “ভবন দুটি আগের পরিত্যক্ত তালিকায় থাকতে পারে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, “পরিত্যক্ত ভবন দুটি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপসারণ করা হবে।”

