ফরিদপুর প্রতিনিধি:
বাবার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে দু’দিন আগে সন্তানদের সংবাদ সম্মেরনের পর এবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করলেন বাবা সিকদার আবুল কালাম আজাদ (৭১)। রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ‘মেয়ের স্বেচ্ছাচারিতার ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে এক অসহায় পিতার দুটি কথা’ শিরোনামে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে তাসনিম ফারজানা (২৯) আমার ‘মাদকাসক্ত’ দুই ছেলে বরকত আল আজাদ (৪১) ও রহমত আল আজাদকে (৩৯) নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে যে সব অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। গত ১৬ অক্টোবর মাগুরা পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযানে অংশ হিসেবে ঝিনাইদহের কোর্টচাঁদপুর থেকে বরকত ও রহমতকে আটক করে। খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় তার জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে তিনি মাগুরা পুলিশের সহায়তায় তাদের ফরিদপুরের লাইফ কেয়ার মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেন।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করায় আমি মেনে নিতে পারিনি। একারণে ওই মায়ের মৃত্যুর পর সে দুই ভাইকে মাদকাসক্ত করে তাদের বশ করে আমার বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আমার স্ত্রী মৃত্যুর সময় ব্যাংকে তিন কোটি টাকা গচ্ছিত রেখে যান। মেয়ে নমিনি হওয়ার সুবাদে সে ওই টাকা তুলে আত্মসাৎ করে।
তিনি বলেন, পিতা হিসেবে তিনি দুই ছেলেকে মাদকের সর্বনাশা পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য বহু চেষ্টা করেও সফল হননি। তাদের বিয়েও করতে দিচ্ছে না আমার মেয়ে। কেননা দুই ছেলে বিয়ে করলে তার (মেয়ের) কর্তৃত্ব থাকবে না।
সিকদার আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ফরিদপুরের ওই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা ভালো না হওয়ায় গত ২০ নভেম্বর তিনি মাগুরা পুলিশের সহায়তায় তাদের ওই কেন্দ্র থেকে যশোরের আহসানিয়া মিশন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু ফরিদপুরের লাইফ কেয়ার মাসকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে সফল হয়নি।
ফরিদপুরের লাইফ কেয়ার মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক বলেছেন দুই ছেলে নেশাগ্রস্ত নন এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা সঠিক কথা বলছে না। দুই ছেলে যদি মাদকাসক্তই না হয় তাহলে তারা তাদের ভর্তি করলো কেন। সম্পত্তি জোর করে লিখে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সম্পত্তি আমার ছেলেদের, তাদেরই থাকবে। আমি কেন সম্পত্তি লেখাতে যাবো।
আবুল কালাম আজাদের বক্তব্যের ব্যাপারে ফরিদপুর লাইফ কেয়ার মাসকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক আশরাফ আলম খান বলেন, দুই ভাই মাদকাসক্ত নন। তাদের মধ্যে মাদকাসক্তের কোন লক্ষণও দেখা যায়নি। মাগুরার ডিবি পুলিশ এসে দুই ভাইকে কেন্দ্রে দিয়ে যায়। সঙ্গে তাদের বাবাও ছিলেন। তাদের কথায় ওনাদের মাদকাসক্ত হিসেবে ভর্তি করা হয়। তিনি বলেন, তবে ১০/১২ দিন যাওয়ার পর আমরা নিশ্চিত হয় যে তারা মাদকাসক্ত নন।
আবুল কালাম আজাদের অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর মেয়ে তাসনিম ফারজানা বলেন, দুই ভাই আমার বড়। একজন ১২ বছরের অপরজন ১০ বছরের বড়। আমার বড় দুই ভাই আমার কথা শুনবে কেন ? তিনি বলেন, বাবা আমার ব্যাপারে যা বলেছে বলেছেন, এ ব্যাপারে আমার নিজের কথা বলা ঠিক না। উনি যা বলার বলেছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামীর সম্পদের অভাব নেই। আমার ভায়ের সম্পত্তি মেরে খেতে হবে না।
মায়ের তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করা প্রসঙ্গে তাসনিম ফারজানা বলেন, মায়ের টাকার নমিনি ছিলাম আমি। ইচ্ছে করলে সে টাকা আমি নিজেই নিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু ওই টাকা আমি নিজে না নিয়ে তিন ভাইবোনের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করে দিয়েছি।
তাসনিম ফারজানার বড় ভাই এসএম বরকত আল আজাদ বলেন, আমার বোন আমাদের চেয়ে অনেক ছোট। সে আমাদের কন্ট্রোল করবে কেন। আমার বাবার মাথা ঠিক নেই। তাই হয়তো উল্টো পাল্টা কথা বলে বেড়াচ্ছেন।

