ফরিদপুর জেলা পুলিশের অনন্য সব দৃষ্টান্ত - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, জুন ১০, ২০২০

ফরিদপুর জেলা পুলিশের অনন্য সব দৃষ্টান্ত





 

সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর থেকে :
ফরিদপুর পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান (বিপিএম সেবা) যোগদানের পর থেকে এক একটি কাজ করে জেলা পুলিশকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। তার নানামুখি জনকল্যানমুখি কাজ জেলাবাসীর কাছে এক অভূতপূর্ব উদাহরনের নাম। আর এ কারনেই তিনি পেয়েছেন জনবান্ধব পুলিশ সুপার হিসেবে পরিচিতি জেলাবাসির কাছে।

তার হতে ধরে ফরিদপুর পেয়েছে অফুরান সাহসের বলিহারি বলবান হওয়ার মানসিকতা। গত রোজার ঈদ ও করোনা কালিন প্রথম সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি নানা উদাহরন দেখিয়েছেন এই জেলাবাসির কাছে।   



করোনার প্রথম দিন থেকে নিজেদের দুদিনের বেতন দিয়ে শুরু করেন হতদরিদ্রদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য বিতরণ। এরপর শুরু করেন নিম্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বাড়ি বাড়ি রাতের আধাঁরে খাদ্য সামগ্রী পৌছাঁনোর কাজ।

এরই মাঝে চলে আসে রমজানের ঈদ। সেই ঈদেও তিনি শুরু করেন হতদরিদ্রদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ। এছাড়াও তিনি রোজার পুরো মাস জেলা পুলিশের রির্জাভ অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে শহরের শত শত মানুষের মুখে তুলে দেন সেহরি। এরপর ঈদের দিন তাদের জন্য দেয়া হয় বিশেষ খাবার। শত শত মানুষকে জেলা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রক্ত দিয়ে গড়েছেন নজির।

আর তার এই কাজ বাস্তবায়নে তার চার সহকর্মি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জামাল পাশা, মোঃ সাইফুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাশেদুল ইসলাম সহ জেলা পুলিশের সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে এখনো লড়ে চলছেন পথে প্রান্তরে।

তারা রাতদিন পরিশ্রম করে ছুটে চলছেন জেলার এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। তাদের কাজের নিত্য নতুন চমকে সারা জেলাবাসি নতুন করে বাচাঁর সাধ পায়।

গতকদিন আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স কাকলী বেগম ঢাকার একটি হাসপাতালে মাসখানেক আগে মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার তিনদিন পরেই মারা যান। এর কদিন পরেই ঈদুল ফিতরের দিনে তার স্বামী মোবারক হোসেনের করোনা ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। বৃদ্ধা দাদি এখন দেখাশোনা করছে কাকলী বেগমের সদ্যজাত শিশুটির। পুরো বাড়িতে চলছে শোকের পাশাপাশি করোনার থাবা। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেন ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসন।  তাদের সার্বক্ষণিক খবর নিতে পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করেছেন। তাদের জন্য পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন উপহার। নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে যেনো তারা মনোবল না হারায়।

মোবারক হোসেন বলেন, এসপি স্যারের এই মহানুভবতায় নিদারুণ কষ্টের মাঝেও একটু সান্তনা পেয়েছি। আশার আলো দেখছি।

শুধু মোবারক হোসেনের পরিবারেই নয়, সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসনের গৃহিত নানা মানবিক কার্যক্রম অসংখ্য অসহায় পরিবারে স্বস্তি এনেছে।

জেল পুলিশ সূত্রে জানাযায়,  ফরিদপুর পুলিশ সদস্যদের বেতন থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ফরিদপুরের অসংখ্য অসহায় পরিবারে মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের আহবানে জেলা পুলিশের ১৫৫০ জন সদস্যের বেতনের টাকার একটি অংশ মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে যুক্ত হচ্ছে এই তহবিলে। সেচ্ছায় সবাই এগিয়ে আসেন এই কাজে।

জেলা পুলিশের পক্ষ হতে অসহায় মানুষের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুজ্জামানকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে একটি ত্রাণ বিতরণ কমিটি। চালু করা হয় হটলাইন। অসহায় মানুষের ফোন পেলেই পুলিশের রিজার্ভ অফিসার এসআই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পৌঁছে দেয়া হয় খাবার সামগ্রী। যেই পুলিশ অফিসে একসময় ভুক্তভোগীরা যেতো আইনী সহায়তায় সেখানে এখন ত্রাণের জন্য অসহায় মানুষের দীর্ঘ সারি।

গত ৩১ মে রোববার ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ চক্রবর্তী মারা যান।

মৃত্যুর পর তার সৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। এরপর মরদেহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে অম্বিকাপুর শ্মশান ঘাটে নেওয়ার সময় এলাকার লোকজন রাস্তয় বাঁশ দিয়ে বাধা দেয়। তখন ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলের রাশেদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ওসি কোতয়ালী ও অন্য সঙ্গীয় ফোর্সসহ অম্বিকাপুর এলাকার লোকজনদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে বাঁশ সরিয়ে মরদেহ শ্মশান ঘাটে নিয়ে যায়।

শ্মশান ঘাটে মরদেহ দাহ্ করার লোকজন না পাওয়ায় ফরিদপুর জেলা পুলিশের কুইক রেসপন্স দলের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ অ্যাম্বুলেন্স থেকে মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ নামিয়ে শ্মশান ঘাটে রাখেন এবং চিতা সাজানোর জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল রাশেদুল ইসলাম নিজেই কাঠ সংগ্রহ করেন এবং নিজের হাতে চিতা সাজান।

তার সন্তানদের শ্মশান ঘাটের রেজিস্ট্রার লিপিবদ্ধ করতে বললে রাজি না হওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল রাশেদুল ইসলাম অভিবাবকের কলাম নম্বরে স্বাক্ষর করেন এবং পুলিশ নিজেই মরদেহ দাহ্’র সব কাজ সম্পন্ন করেন। যা এক অনন্য নজির গড়েছেন ফরিদপুর জেলা পুলিশ। 


সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, করোনাকাল শুরু হতেই ফরিদপুরের পুলিশ বিভাগের গৃহীত নানা কার্যক্রম শুধু জনসাধারণের নজরই কাড়েনি, তাদের মাঝে আশার আলো ছড়িয়েছে এই ক্রান্তিকালে বেঁচে থাকার।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান (পিপিএম সেবা) এর চৌকস নেতৃত্ব ও আন্তরিকতার কারণেই আমরা এই দুর্যোগকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। তার আহ্বানে সব পুলিশ সদস্য বেতনের একটি অংশ ত্রাণ তহবিলে দিচ্ছেন। 

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের বিষয়টি পুলিশ সদস্যদের জানানোর পরে তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বেতনের একটি অংশ দিয়ে কর্মহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা এই সমাজেরই অংশ। করোনাকালে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশ সদস্যরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেজন্য সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।  
 

ফরিদপুর পুলিশ বাহিনী আইন দিয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে তারা আজ ফরিদপুর বাসির অন্তরের অন্তস্থলে গেথেঁ গেছেন বলে মনে করেন এই জেলার বাসিন্দারা।

Post Top Ad

Responsive Ads Here