অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হোক নিজ পরিবার থেকেইঃ মনিরা সুলতানা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, জুন ০১, ২০২১

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হোক নিজ পরিবার থেকেইঃ মনিরা সুলতানা

 



মতামত//সময় সংবাদ ডটকমঃ


দেশে জনসংখ্যা গণহারে বাড়তে থাকলেও সমাজে কমে যাচ্ছে মনুষ্যত্বপূর্ণ মানুষের সংখ্যা। আজকাল অন্যায় কাজ করতে আর হাত কাঁপে না মানুষরূপী হায়নাদের। কিন্তু দেশে এত আইনকানুন থাকতেও কেন এমন হচ্ছে সেটা কী আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? 



আসলে আমরা কারণগুলো জেনে থাকলেও নিজেদের জায়গা থেকে কখনও এর সমাধান করার চেষ্টা করিনি। এখন আমরা একঘরে বসবাস করেও যেন বড্ড বেশি প্রতিবেশী হয়ে গেছি। আমাদের সামনে মানুষ খুন করার মতো এত বড় অপরাধ দেখেও আমরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাই। অন্যায়ভাবে দিনের পর দিন দুর্নীতি চলছে দম্ভভরে। আমরা এর সবই দেখি তবে প্রতিবাদ করতে ভয় পাই। তাই দুর্নীতির সাথে সহবাস করা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তিতে রূপ নিচ্ছে দিনদিন। কিন্তু অন্যায় দেখলে যে তার প্রতিবাদ করা প্রতিটি মানুষের ইমানি দায়িত্ব সেটাও আজকাল আর কেউ মনে রাখতে চাই না। কেউ সরাসরি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সক্ষম না হলেও অন্তর থেকে যেন তার বিরুদ্ধে জিহাদ করেন সেই মর্মে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন।( সগীহ বুখারী)




আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। আর সেই শিশুর ভবিষ্যতকে নিরাপদ রাখতে পরিবারের ভূমিকা অন্যতম। একটি শিশুর জন্য পরিবারই তার প্রথম বিদ্যাপীঠ। পরিবার শিশুদের নীতিনির্ধারক তাই পরিবারের সকল সদস্যকে সন্তানের শৈশব সুন্দর করে তোলায় ভূমিকা রাখতে হয়। একজন অত্যাচারী পিতা-মাতার সন্তান কখনও তার পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা নিতে পারে না। কারণ যে পিতা-মাতার ন্যায়নীতি শিক্ষায় সন্তানের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে উঠবার কথা সেই পিতা-মাতা নিজেরাই যদি অন্যায় অপরাধে লিপ্ত থাকেন তবে তাদেরর থেকে কোনো ভালো শিক্ষা নেওয়া কখনওই সম্ভব নয়।



তাই নিজ পরিবারের কোনো সদস্য যদি অন্যায় কাজের সাথে যুক্ত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নিয়ে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা পরিবারের দায়িত্ব।


 শিশুর নৈতিকতা রক্ষায় পরিবারের ভূমিকা-


*পরিবারে শিশুদের নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তার দুনিয়া ও আখিরাত কল্যাণকর হয়। 

*শিশুকে সব রকম শিষ্টাচার শেখাতে হবে, যাতে তার আচার-ব্যবহার সুন্দর হয় এবং সমাজে সবার ভালোবাসা ও সহানুভূতি লাভ করতে পারে।

*শিশুকে তার নিজের ভালো–মন্দ, ন্যায়–অন্যায়, কল্যাণ ও অকল্যাণ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে, যাতে সে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।

*শিশুকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং অন্যায় কাজকে ঘৃণা করার বিষয়ে জানাতে হবে, যাতে সে কোনো প্ররোচনাকারীর স্বীকার না হয়।


সমাজে নানা ধরনের অপরাধ বিদ্যমান আর এই অপরাধের সূচনা হয়- হতাশা, অভাব-অনটন,  মাদকদ্রব্য সেবন, মিথ্যা কথা বলা ও ছোটখাটো চুরি ছিনতাই করার মাধ্যমে। তাই পরিবারের কোনো সদস্য ভুল পথে পা বাড়ালে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে তাকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করতে হবে।



হজরত নুহ (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আমার রব! পৃথিবীতে অকৃতজ্ঞদের একটি গৃহও রেখো না। যদি তুমি তাদের ছেড়ে দাও, তবে তারা তোমার বান্দাদের বিপথগামী করবে এবং তারা অপরাধী ও পাপী সন্তানই জন্ম দেবে।’ (সুরা-৭১ নুহ, আয়াত: ২৬-২৭)। 

তাই আমাদের সভ্যতার উন্নয়নের জন্য আমাদের শিশুদের প্রথমে উন্নত চিন্তা ও পবিত্র জীবনের দীক্ষা দিতে হবে।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে হবে। 


একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, যখন অপরাধী বারবার অপরাধ করে ছাড় পেয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারে তোমরা অটল থেকো, আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীরূপে যদিও নিজেদের প্রতিকূলে যায় অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের, সে ধনী বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের জন্য উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে নিজ নিজ খেয়ালখুশির (পক্ষপাতিত্বের) বশীভূত হয়ো না।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ১৩৫)



মহান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণে তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)


পবিত্র কোরআন সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করতে পারলে সেই জীবনে কোনো অন্যায়ের ছিটেফোঁটা থাকে না। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে ন্যায়শাস্ত্র মেনে চলতে হবে। সর্বোপরি, পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে একটি সন্তানের জন্য সঠিক পিতামাতা নির্বাচন করে দিতে হবে যাতে সে নৈতিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত না হয়। আর এভাবেই পরিবার থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সূচনা হতে পারে। সুশীল সমাজ গঠন করার আগে সুশীল পরিবার গঠনের দায়িত্ব নিতে হবে নিজেদের।


লেখকঃ মনিরা সুলতানা 

পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, একতাবদ্ধ সংগঠন ও সাবেক শিক্ষার্থী, চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ। 

Post Top Ad

Responsive Ads Here