আজ শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস | সময় সংবাদ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, জুন ১২, ২০২২

আজ শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস | সময় সংবাদ

 

আজ শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস | সময় সংবাদ



সময় সংবাদ ডেস্ক:




১২ জুন, আজ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষাকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে একজোটে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতে এই দিবসটি পালিত হয়। 


১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ’ অনুমোদিত হয়। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিশুশ্রম বন্ধ করতে এক কর্মসূচি হাতে নেয় এবং ২০০২ সালের ১২ জুন থেকে আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম সংস্থা (আইএলও) বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহনের মাধ্যমে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। 


‘সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করি, শিশুশ্রম বন্ধ করি’,এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা বিশ্বে দিবসটি পালন করা হবে। শনিবার (১১ জুন) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।


আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ আরো অনেক দেশে এ দিবসটি পালন করছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সর্বশেষ এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের প্রতি ছয় জন শিশুর মধ্যে একজন শ্রমিক এবং প্রতি তিন শিশু শ্রমিকের মধ্যে দুইজনই গৃহকর্মের সঙ্গে যুক্ত। 


বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই গৃহকর্মী এ সব শিশুদের সুরক্ষায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। আইএলও’র হিসেবে সারা বিশ্বে প্রায় ২৪ কোটি ৬০ লাখ শিশু নানাভাবে শ্রম বিক্রি করছে। তার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে ১৮ কোটি। আইএলও’র হিসেবে যে সংখ্যা দেয়া হয়, বাস্তবে তার সংখ্যা আরো বেশি। সম্প্রতি আইএলওর একটি হিসেব মতে, ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশু, যারা শ্রমে জড়িত, তাদের সংখ্যা ২৪ কোটি ৭ লাখ, ৫ বছর থেকে ১৪ বছরের শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ২১ কোটি ১০ লাখ শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। 


২০১৩ সালের শ্রম জরিপে দেখা যায়, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ। শিশুশ্রম জরিপে দেখা যায়, ১৩ লাখ শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে আমরা কোনোভাবেই শিশুদের দেখতে চাই না। বাংলাদেশের শিশুরা কলকারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাসাবাড়িতে কাজ করা ছাড়াও মাদক উত্পাদন, পাচার, পর্নগ্রাফি, যৌনকর্মী ও দাসত্বের শৃঙ্খলে আজও বন্দী। শিল্পায়নের যুগেও কমছে না ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত অসংখ্য শিশুশ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।


‘প্রজন্মের জন্য নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য’ সেমিনার আর গোলটেবিল বৈঠকে এমন অনেক স্লোগান উচ্চারিত হয় এই দিবসে। কিন্তু সে গুলো শুধু মাত্র সেমিনার আর গোলটেবিল বৈঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। বিভিন্ন এনজিও শিশুদের কথা বলে বিদেশ থেকে যে ফান্ড কালেকশান করে সে গুলোর কতটুকু শিশুদের জন্য ব্যয় হয় ? আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, বেশীরভাগ শিশুই এমন অবস্থায় কাজ করছে যা ‘ক্রীতদাসের কাছাকাছি’। এতে বলা হয়েছে, কর্মরত বেশিরভাগ শিশু শ্রমিকের বয়সই ৫ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে এবং এদের ৭১ শতাংশ মেয়ে শিশু। এদের অধিকাংশই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। 


প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এ সব শিশু শারিরীক এবং যৌন সহিংসতার ঝুঁকির মুখে রয়েছে। শিশুশ্রম বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রকাশিত থাকে উল্লেখ করে আইএলও এ ব্যাপারে নতুন আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান আহ্বান করেছে। শিশু শ্রমিকরা বেশির ভাগই ঘরে কাজ করায় তাদের কাজের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। শিশুরা কাজ করে কিন্তু শ্রমিক হিসেবে তাদেরকে গণ্য করা হয় না এবং পারিবারিক পরিবেশে থাকা সত্বেও তাদের প্রতি পরিবারের সদস্যের মতো আচরণ করা হয় না, বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।


জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু শ্রমিক রয়েছে যাদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু। জরিপে বলা হয়েছে দেশের মধ্যে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা সব থেকে বেশি ঢাকা বিভাগে যা প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ এবং এর পরেই চট্টগ্রামে রয়েছে ৫.৮ শতাংশ শিশু শ্রমিক। দেশের মধ্যে শিশুশ্রম সব চেয়ে কম বরিশালে ১.৭ শতাংশ।


শিশুরাই দেশ ও জাতির কর্ণধার। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এজন্য শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের শ্রমবাজারে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশ ও জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। যেহেতু শিশুরা আগামী দিনে দেশ ও জাতির হাল ধরবে তাই শিশুদের শ্রম থেকে মুক্তি দিয়ে শিক্ষায় আলোকিত করতে হবে।


দিবসটি উপলক্ষে আইএলও, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বেসরকারি সংস্থা দিবসটি বেশকিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচি পালনে এসব সংস্থার সঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সমন্বয় করছে। 


শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শিশুশ্রম নিরসনে শ্রম মন্ত্রণালয়সহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অধিদপ্তর, সংস্থার কর্মকর্তাদের আরো আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন, শিল্প মালিকদের কলকারখানায় শিশুদের নিয়োগ না দিতে এবং সমাজের সকল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থাকে আরো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 



Post Top Ad

Responsive Ads Here