![]() |
| ঝিনাইদহে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের অবাধ বিক্রি: ৬ কোটি টাকার চুক্তি, লক্ষ্যমাত্রা ২০০ কোটি |
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ গাইড বই। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এসব বই নিষিদ্ধ করেছে, তবুও প্রশাসনিক পদক্ষেপের অভাবে শহরের বইয়ের দোকান, ফুটপাতের হকার ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যাচ্ছে লেকচার, ব্যাতিক্রম, পাঞ্জেরী, ও অ্যাডভান্সের নিষিদ্ধ গাইড বই।
তথ্য অনুসারে, ঝিনাইদহের স্কুল ও কলেজগুলোর প্রধানরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন নিষিদ্ধ গাইড কোম্পানির কাছ থেকে। প্রতি শিক্ষার্থীকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে এসব গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে লেকচার, ব্যাতিক্রম, পাঞ্জেরী ও অ্যাডভান্স পাবলিকেশনের নিষিদ্ধ গাইড বই কিনছে।
অভিভাবকরা বলছেন, এই ধরনের গাইড বই শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা নষ্ট করছে। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, কিছু শিক্ষক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল দেখানোর লোভ দেখিয়ে নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে চাপ দিচ্ছেন।
ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় সরকার নিষিদ্ধ করা গাইড বইয়ের ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে। স্কুল-কলেজের প্রধানদের সরাসরি যোগসাজসে এই অবৈধ গাইড বইয়ের ব্যবসা চলছে। উদয়ন লাইব্রেরী, পাগলাকানই ব্যতিক্রম ভবন, এবং শহরের অন্যান্য স্থানে এসব নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের বড় বড় মজুদ তৈরি হয়েছে। উদয়ন লাইব্রেরীর মালিক রাকিবুল ইসলাম রণি, যিনি ১২টি নিষিদ্ধ গাইড কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, ২০২৬ সালে প্রায় ২ কোটি টাকার গাইড বই বিক্রির চুক্তি করেছেন বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির বড় আর্থিক চুক্তি হচ্ছে। এসব গাইড বই কিনতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম লেকচার গাইড কোম্পানীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন।
ঝিনাইদহের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধানরা একযোগে এসব নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের বিক্রির চুক্তি করেছেন এবং একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন যে, বই না কিনলে তাদের সন্তানদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় না।
অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের কারণে তাদের সন্তানদের সৃজনশীলতা ও লেখার দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু অভিভাবক জানাচ্ছেন, তাদের সন্তানদের জন্য ৮ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে নিষিদ্ধ গাইড ও টেস্ট পেপার কিনতে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িতদের তালিকা চান।
এদিকে, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ.বি.এম. খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেছেন, তথ্য প্রমাণ পেলে তারা অবৈধ গাইড বই বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। তিনি জানান, এই গাইড বই শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননশীলতা বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এবং ঝিনাইদহ জেলায় এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

