![]() |
ফরিদপুর বিভাগ হলে জনগণের জন্য কী কী সুযোগ-সুবিধা আসতে পারে |
নাজমুল হাসান নিরব, ফরিদপুর:
শোনা যাচ্ছে দেশের প্রশাসনিক মানচিত্রে যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন দুটি বিভাগ। এর মধ্যে একটি—ফরিদপুর বিভাগ। সম্প্রতি প্রশাসন সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে নতুন বিভাগ হিসেবে গঠনের সুপারিশ করেছে। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় এটি হবে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে থাকতে পারে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর জেলা। বিভাগীয় সদর দপ্তর হবে ফরিদপুর শহরে। পূর্বে ‘পদ্মা বিভাগ’ নামে নামকরণের প্রস্তাব থাকলেও সর্বশেষ আলোচনায় “ফরিদপুর বিভাগ” নামটি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রস্তাবিত বিভাগের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ৯১৩ বর্গকিলোমিটার, আর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৭২ লাখের বেশি। কৃষি, শিল্প ও নদীকেন্দ্রিক বাণিজ্যে সমৃদ্ধ এ অঞ্চল প্রশাসনিক স্বতন্ত্রতায় আরও সুবিধা পেতে পারে।
জনগণের সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধা
- প্রশাসনিক সেবা সহজলভ্যতা: মানুষকে আর ঢাকায় যেতে হবে না; বিভাগীয় দপ্তর কাছাকাছি থাকায় সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে।
- উন্নয়ন প্রকল্পে অগ্রাধিকার: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামো খাতে বাড়তি বাজেট ও মনোযোগ পাওয়া যাবে।
- স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি: বিভাগীয় পর্যায়ে নিজস্ব কর্মকর্তারা থাকায় জনগণের দাবি দ্রুত প্রতিফলিত হবে।
- চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ: নতুন অফিস, দপ্তর ও অবকাঠামো গড়ে উঠলে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে।
- সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচিতি: পদ্মাপাড়ের এ অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য জাতীয়ভাবে আরও দৃশ্যমান হবে।
সম্ভাব্য অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জ:
- অর্থনৈতিক ব্যয় বৃদ্ধি: নতুন দপ্তর, ভবন ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, ফলে অন্য উন্নয়ন প্রকল্পে চাপ পড়তে পারে।
- প্রশাসনিক জটিলতা: নতুন জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও বিদ্যমান দপ্তরের পুনর্বিন্যাসে সময় ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে।
- রাজনৈতিক মতপার্থক্য: সদর দপ্তর বা জেলা অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বাড়তে পারে।
- সময়ক্ষেপণ ও অনিশ্চয়তা: বাস্তবায়নে ধীরগতি হলে জনগণের প্রত্যাশা হতাশায় রূপ নিতে পারে।
- পরিবেশ ও নগরায়ণ চাপ: সদর দপ্তরকে ঘিরে যানজট, অতিরিক্ত নগরায়ণ ও কৃষিজমির ওপর চাপ তৈরি হতে পারে।
- সামঞ্জস্যহীন উন্নয়ন: কিছু জেলা দ্রুত অগ্রগতি পেলেও পিছিয়ে থাকা জেলাগুলো সমান সুবিধা নাও পেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং সেখানেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এ বৈঠক হতে পারে।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদসচিব আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রি-নিকার বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লা শহরের নামেই নতুন দুটি বিভাগ এবং দুটি নতুন উপজেলা গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বর্তমানে দেশে মোট ৮টি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ময়মনসিংহকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিকার বৈঠকে বৃহত্তর ফরিদপুর নিয়ে ‘পদ্মা বিভাগ’ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলা নিয়ে ‘মেঘনা বিভাগ’ গঠনের প্রস্তাব ওঠে। তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তা স্থগিত রাখা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতেও নতুন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সাবেক এক সচিব মনে করেন, বিভাগ গঠিত হলে নতুন পদ সৃষ্টি ও খরচের খাত বাড়বে, কিন্তু জনগণের প্রত্যক্ষ সুফল কম আসতে পারে। তার মতে, প্রযুক্তি ও ভিডিও কনফারেন্সের যুগে প্রশাসন বাড়ানো অনেকাংশেই অযৌক্তিক।

