রহস্যে ঘেরা বাউল শাহ ফকিরের আস্থানা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, অক্টোবর ১০, ২০২৫

রহস্যে ঘেরা বাউল শাহ ফকিরের আস্থানা

রহস্যে ঘেরা বাউল শাহ ফকিরের আস্থানা
রহস্যে ঘেরা বাউল শাহ ফকিরের আস্থানা

 


নাজমুল হাসান নিরব/হাসানুর রহমান: 

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নাগপাড়া গ্রামের একটি প্রাচীন মসজিদের ভেতরে রয়েছে অস্বাভাবিক আকৃতির দুটি কবর। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই কবর দুটি প্রতিবছর ঘুরে যায় এবং এর অবস্থান ধীরে ধীরে বাঁকা হয়ে উঠছে। রহস্যে ঘেরা এই কবর দুটি আধ্যাত্মিক সাধক বাউল শাহ ফকির ও তাঁর শিষ্য জমির শাহ ফকিরের বলে জানা গেছে।


মসজিদটির নাম নাগপাড়া মোকামবাড়ি নূর-ই জামে মসজিদ। প্রায় ১০ বিঘা জমির উপর গড়ে ওঠা এই ঐতিহাসিক স্থাপনার চারপাশে রয়েছে পুকুর, ফলদ গাছ ও প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা শান্তিপূর্ণ আবহ। পাশেই আরেকটি কবরে শায়িত আছেন বাউল শাহ ফকিরের আরেক শিষ্য আজিম শাহ ফকির।


স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় ৫০০ বছর আগে পাবনা জেলা থেকে নাগপাড়ায় আসেন আধ্যাত্মিক সাধক বাউল শাহ ফকির। প্রথমে তিনি মনিরুদ্দিন মণ্ডলের বাড়িতে রাখাল হিসেবে কাজ করতেন। বলা হয়, তিনি গরু-ছাগলকে অন্যের ফসল না খাওয়িয়ে শুধু ঘাস খাওয়াতেন এবং বিষধর গোখরা সাপের সঙ্গে একই কক্ষে অবস্থান করতেন।


একবার এলাকায় প্রচণ্ড খরার সময় ফসল নষ্ট হয়ে গেলে বাউল শাহ ফকির কয়েকদিন অনাহারে ধ্যানমগ্ন হয়ে সিজদায় থাকেন। এরপরই এলাকাজুড়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়— এমনই বিশ্বাস স্থানীয়দের। এই ঘটনার পর থেকেই মানুষ তাঁর আধ্যাত্মিক ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ‘ফকির’ হিসেবে মানতে শুরু করে।


পরবর্তীতে এলাকার জমিদার সাতকড়ি চন্দ্র রায় বাউল শাহ ফকিরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলিল লিখে তাঁকে একাধিক জমি দান করেন। সেসব জমিতেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে মোকামবাড়ি আস্থানা।


বর্তমানে মোকামবাড়ি মসজিদের বারান্দায় অবস্থিত বাউল শাহ ফকির ও জমির শাহ ফকিরের দুটি কবরের আকৃতি এখনো স্থানীয়দের কাছে রহস্যময়। কবর দুটি সামান্য বাঁকা এবং ঘূর্ণায়মান হওয়ায় অনেকেই একে ‘অলৌকিক নিদর্শন’ বলে মনে করেন।


মাজারের ইমাম আব্দুল আলীম জানান, “এই মসজিদে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয় এবং এখানে স্থানীয় শতাধিক শিশু-কিশোর কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করছে। মাজারে মানত করলে অনেকে মনোবাসনা পূরণ হওয়ার কথা বলেন।”


ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্র তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’–এ উল্লেখ করেছেন যে, ১৮০০ সালের প্রথম দিকে বাউল শাহ ফকির সুফি সাধনা ও মানবতার বাণী প্রচারে সক্রিয় ছিলেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি মানুষকে শান্তি, সহমর্মিতা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছেন।


বর্তমানে বাউল শাহ ফকিরের নামে শৈলকুপা ও আশপাশের গ্রামে ১২.৮৪ একর জমি ওয়াকফ তালিকাভুক্ত রয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাজার সংলগ্ন সম্পত্তি ও প্রাচীন স্থাপনা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।


স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, এই ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক স্থাপনাটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং সংস্কৃতিগত ঐতিহ্যেরও অংশ। তারা চান, বাউল শাহ ফকিরের এই মোকামবাড়ি আস্থানা রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ ও তদারকি করা হোক, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর স্মৃতি ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য জানতে পারে।



Post Top Ad

Responsive Ads Here