গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা ভিন্নভাবে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছেন। তবে তাদের এই বর্ষবরণে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিকতা। কোনো কর্মকর্তাই পরেননি কোনো নতুন পোশাক। আয়োজন করা হয়নি পান্তা-ইলিশে বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এসব কর্মকর্তা তাদের নিজেদের বেতনের টাকা দিয়ে প্রায় দুই শতাধিক নিরন্ন মানুষদের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। যতদিন করোনা থাকবে ততদিন এসব কর্মকর্তা তাদের বেতনের একটি অংশ নিরন্ন মানুষদের জন্য ব্যয় করবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমান। তবে আগামীতে তারা ভিন্নভাবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। এ ক্ষেত্রে টিম কোটালীপাড়া নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। চালু করা হয়েছে একটি মোবাইল সেবা হটলাইন। নিরন্ন মানুষদের পক্ষ থেকে এই ফেসবুক পেজ বা মোবাইল হটলাইনে যোগাযোগ করলেই তাদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের এই উদ্যোগকে উপজেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাগত জানিয়েছে।
উপজেলা সদরের এক বাসিন্দা বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। করোনাভাইরাসের কারণে এক মাস ধরে আমার ব্যবসা বন্ধ। বর্তমানে সংসার চালানো আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আমি ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পয়লা বৈশাখের দিনে আমার বাড়িতে তিনি গোপনে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন।
উপজেলার কুশলা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, আমাদের উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত প্রশাংসার দাবি রাখে। এসব কর্মকর্তারা তাদের রুটিন মাফিক দাফতরিক কাজের বাইরে এসে এই দুর্যোগময় সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা তাদের নিজেদের বেতন দিয়ে নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন। এটা কোটালীপাড়ায় একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন সেন কংকন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া অনেক শ্রমজীবী মানুষ আছে যারা প্রকাশ্যে ত্রাণ নিতে পারেন না। আবার ক্ষুধার জ্বালাও সহ্যও করতে পারেন না। এসব মানুষদের কথা চিন্তা করে ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তারা টিম কোটালীপাড়া গঠন করেছেন। এই টিম কোটালীপাড়া ত্রাণ বিতরণের জন্য যে ফেসবুক পেজ ও মোবাইল সেবা হটলাইন চালু করেছেন তা একটি ভালো উদ্যোগ।
ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা টিম কোটালীপাড়া আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে জাতির এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকতে চাই। যেসব পরিবার দেখতে সচ্ছল কিন্তু প্রকৃত পক্ষে অসচ্ছল এবং লজ্জায় কাউকে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন না, আমরা এসব মানুষদের নিরবে সেবা দিতে চাই।
এ বিষয়ে ডিসি শাহিদা সুলতানা বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা এমনিতেই মানুষকে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকি। এমন একটি দুর্যোগের মধ্যে “টিম কোটালীপাড়া” এগিয়ে এসেছে, মানুষকে সহয়তা করছে এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই, পাশাপাশি সমাজের যারা বৃত্তবান আছেন তাদেরকেও এমন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করারও আহ্বান জানাই।
সময়/দেশ/রাজ