সোনালি আঁশের রুপালি পাটকাঠিতে সালথার কৃষকদের শতকোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫

সোনালি আঁশের রুপালি পাটকাঠিতে সালথার কৃষকদের শতকোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা

সোনালি আঁশের রুপালি পাটকাঠিতে সালথার কৃষকদের শতকোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা
সোনালি আঁশের রুপালি পাটকাঠিতে সালথার কৃষকদের শতকোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা


শরিফুল হাসান, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:

গেল কয়েক বছর সোনালী আঁশ পাট আবাদ করে চাহিদামতো লাভের মুখ দেখেননি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার প্রান্তিক কৃষকেরা। প্রতিবছরই তাদের অভিযোগ ছিল,পাটচাষ করে লোকসান হচ্ছে, দামও মিলছে না। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। পাটের আঁশের দাম কিছুটা কম হলেও পাটকাঠির দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। যা আগে কখনো পাননি তারা। ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।


সোনালি আঁশে খ্যাত ফরিদপুর বাংলাদেশের শীর্ষ জেলা। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয় সালথার ৮টি ইউনিয়নে। এখানকার কৃষকরা জানান, পাটের আঁশের তুলনায় বর্তমানে অবহেলিত পাটকাঠির কদর বেড়েছে।


একসময় রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া কিংবা পানের বরজের ছাউনি তৈরির কাজেই সীমাবদ্ধ ছিল পাটকাঠি।


বর্তমানে পাটকাঠি দিয়ে তৈরি হচ্ছে, কার্বন পেপার,কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি,আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপাদান,মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার ও পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ,দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ,ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল,বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাটকাঠির দামও দিন দিন বাড়ছে।


সোনালি আঁশের রুপালি পাটকাঠিতে সালথার কৃষকদের শতকোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা



কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর পাটের ভালো ফলন হয়েছে। যদিও উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু বাজার দর সেই তুলনায় বাড়েনি। তাই আঁশে ক্ষতি হলেও কাঠিতে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছেন কৃষকেরা।


সালথার কৃষক ফারুক মোল্যা বলেন, “পাটের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী আমরা তেমন লাভবান নই। তবে পাটকাঠির দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। আঁশে না হলেও কাঠিতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আগে পাটকাঠির ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল জ্বালানি আর বেড়া বানানোয়। এখন বিশ্ববাজারে চাহিদা থাকায় কাঠিও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে।”


সালথার পাটকাঠি ব্যবসায়ী সামাদ মাতুব্বর জানান, “পাটকাঠি এখন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। বড় বড় কোম্পানির এজেন্টরা গ্রামে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে।”


সাতক্ষীরা থেকে আসা ব্যবসায়ী মোস্তফা শেখ বলেন, “আমি ৭ বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছি। আগে সালথা ও নগরকান্দা থেকে সস্তায় কিনে বেশি দামে বিক্রি করতাম। কিন্তু বর্তমানে ফরিদপুর জেলায় অর্ধশতাধিক কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। ফলে এখানকার কাঠি দিয়েই সেই চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে গেছে। দামও বেড়েছে অনেক। এখন অনেকেই পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।”


সোনালি আঁশের রুপালি পাটকাঠিতে সালথার কৃষকদের শতকোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা
সোনালি আঁশের রুপালি পাটকাঠিতে সালথার কৃষকদের শতকোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা



সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সালথার বাড়ির সামনে, পাকা সড়কের পাশে কিংবা মাঠে - যেখানে চোখ যায়, সেখানেই শুকানো হচ্ছে পাটকাঠি। ১০০ আঁটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়।


১ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত পাট থেকে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকার পাটকাঠি পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, এটি তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।


সালথা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এর উৎপাদিত পাটকাঠির বাজারমূল্য অন্তত শত কোটি টাকার বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।পাটকাঠির এই মূল্যবৃদ্ধি স্থানীয় কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।



Post Top Ad

Responsive Ads Here