কোরআন ও হাদীসের আলোকে শবে মেরাজ: বিশ্বাস, শিক্ষা ও তাৎপর্য - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

সোমবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৫

কোরআন ও হাদীসের আলোকে শবে মেরাজ: বিশ্বাস, শিক্ষা ও তাৎপর্য

 

কোরআন ও হাদীসের আলোকে শবে মেরাজ: বিশ্বাস, শিক্ষা ও তাৎপর্য
কোরআন ও হাদীসের আলোকে শবে মেরাজ: বিশ্বাস, শিক্ষা ও তাৎপর্য


ইসলাম ডেস্ক:

শবে মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে এক মহিমান্বিত ও অলৌকিক ঘটনা। কোরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ ঘটনাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে এক অনন্য নিদর্শন। যদিও মেরাজ সংঘটিত হওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ ও মাস নিয়ে ঐতিহাসিকভাবে মতভেদ রয়েছে, তবে অধিকাংশ আলেমের মতে রজব মাসের ২৭ তারিখের রাতেই এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রসিদ্ধ।


মেরাজের সত্যতা ও ঈমানের বিষয়:

মেরাজের ঘটনা কোরআন, সহীহ হাদীস ও ইসলামী ইতিহাসে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজ কুদরতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একই রাতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা এবং সেখান থেকে সপ্তম আসমানের ঊর্ধ্বে নিজ দরবার পর্যন্ত নিয়ে যান এবং আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনেন। এই ঘটনাকে অস্বীকার করা ঈমানের পরিপন্থী।


কোরআনে মেরাজের বর্ণনা:

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন— “সুবহানাল্লাজি আসরা বিআব্দিহি লাইলাম মিনাল মাসজিদিল হারাম ইলাল মাসজিদিল আকসাৃ”

(সূরা বনি ইসরাইল: ১)


অর্থাৎ, মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের একাংশে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত—যার আশপাশে আমি বরকত দান করেছি—তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য।


মেরাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ:

মেরাজের রাতে আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে উম্মতের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। এটি মেরাজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার, যা ইসলামের মূল স্তম্ভ।


কাফেরদের উপহাস ও আবু বকর (রা.)-এর বিশ্বাস:

মেরাজের ঘটনা শুনে মক্কার কাফেররা উপহাস করে এবং অসম্ভব বলে অস্বীকার করে। তারা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিনা দ্বিধায় বলেন—

“যদি মুহাম্মাদ (সা.) বলে থাকেন, তবে তা অবশ্যই সত্য।”

এ কারণেই তিনি ‘সিদ্দীক’ উপাধিতে ভূষিত হন।


বাইতুল মুকাদ্দাসের প্রমাণ:

কাফেররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করলে আল্লাহ তায়ালা অলৌকিকভাবে তাঁর চোখের সামনে বাইতুল মুকাদ্দাস তুলে ধরেন। তিনি প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেন, যা সহীহ মুসলিমে বর্ণিত।


বোরাক ও ঊর্ধ্বজগতের সফর:

মেরাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘বোরাক’ নামক বাহনে করে ভ্রমণ করানো হয়। এর গতি ছিল দৃষ্টিসীমার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। এটি কোনো কল্পিত প্রাণী নয়; বরং আল্লাহর সৃষ্টি এক বিশেষ বাহন।


সাত আসমান ও নবীদের সাক্ষাৎ:

মেরাজে রাসূল (সা.) সাত আসমানে সাতজন মহান নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন—আদম (আ.), ঈসা (আ.), ইউসুফ (আ.), ইদরিস (আ.), হারুন (আ.), মূসা (আ.) ও ইবরাহীম (আ.)।


সিদরাতুল মুনতাহা ও জান্নাত দর্শন:

সপ্তম আসমানে অবস্থিত সিদরাতুল মুনতাহা হলো সৃষ্টিজগতের শেষ সীমা। এখানেই রাসূল (সা.) হযরত জিবরাইল (আ.)-কে তাঁর আসল রূপে দেখেন এবং জান্নাত ও লওহে মাহফুজ সম্পর্কেও অবগত হন।


মেরাজ আমাদের শেখায়—


-গায়েবের বিষয়ে দৃঢ় ঈমান রাখা


-নামাজে গুরুত্ব দেওয়া


-আল্লাহর আদেশে পূর্ণ আনুগত্য


-যুক্তির ঊর্ধ্বে গিয়ে কোরআন-হাদীসকে বিশ্বাস করা


মেরাজ কোনো রূপক বা স্বপ্ন নয়, বরং স্বশরীরে সংঘটিত এক সত্য ঘটনা। বিজ্ঞান স্বীকার করুক বা না করুক, একজন মুমিনের জন্য কোরআন ও হাদীসই চূড়ান্ত দলিল।


মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মেরাজের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।


হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট

সাবেক ইমাম ও খতিব, হযরত দরিয়া শাহ (রহ.) মাজার জামে মসজিদ, কদমতলী, সিলেট

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম, সিলেট

Post Top Ad

Responsive Ads Here